বীউনিকের নির্দেশনা মানছে না রাষ্ট্রায়ত্তসহ ১২ বিমা কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা মানছে না ১২ বিমা কোম্পানি। যার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বিমা করপোরেশন ও সাধারণ বিমা করপোরেশনের নাম রয়েছে। তালিকায় যেমন বিতর্কিত কোম্পানি রয়েছে, সেইসঙ্গে রয়েছে সাধারণ ও জীবন বিমা খাতের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিও। আর তথ্য না পাওয়ার কারণে কোম্পানিগুলোর বিষয়ে অন্ধকারে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বীউনিক)। তথ্য না দেয়ার কারণে কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিমা খাত সংশ্লিষ্টরা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানের পর সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। যার ধারাবাহিকতা বিমা খাতেও দৃশ্যমান। যে কারণে বিমা খাতের অনিয়ম-জালিয়াতি বন্ধে সক্রিয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিউনিক। কিন্তু তারপরও কিছু কোম্পানি এখনও পুরোনো তিমিরেই রয়ে গেছে। খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেই উপেক্ষা করছে কোম্পানিগুলো। বিমার আলোচিত ডিজিটাইজেশন প্ল্যাটফর্ম ইন্স্যুরেন্স ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (আইআইএমএস) জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিচ্ছে না জীবন ও সাধারণ বিমা খাতের ১২টি কোম্পানি। এর মধ্যে বেসরকারি জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে পপুলার, বায়রা, সোনালী ও সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স। আর সাধারণ সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো হচ্ছে রিলায়েন্স, জনতা, প্যারামাউন্ট, পিপলস, ফিনিক্স ও পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স।

স্বচ্ছতা ও জবাবিদিহতা এড়াতেই কোম্পানিগুলো তথ্য দিচ্ছে না মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়া শুরুর পর নিয়ম ভেঙে চলা কোম্পানিগুলোকে শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। যে কারণে কোম্পানিগুলো কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিউনিক কোম্পানিগুলোকে শাস্তির মুখোমুখি করেনি। বরং রহস্যজনক কারণে প্রশ্রয় দিয়েছে। যে কারণে সোনালী, বায়রা ও সানফ্লাওয়ার লাইফের মতো জীবন বিমা কোম্পানিগুলো বিগত সময়ে নিয়ম ভেঙে বিতর্কে জড়িয়েছে। এই তালিকায় থাকা কয়েকটি কোম্পানি বিমা দাবি পরিশোধ করতে না পারাসহ কিছু কারণে আস্থার সংকটে পড়েছে।

তথ্যমতে, বিমা খাতের এগিয়ে থাকা কোম্পানি পপুলার লাইফ ও রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের মতো স্বনাম খ্যাত সামনের সারির কোম্পানিগুলোও যখন নিয়ম ভাঙছে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পপুলার লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিএম ইউসুফ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

যদিও ‘কোনো গাফিলতির কারণে নয়, বরং পারিপার্শ্বিক কারণে সময়মতো তথ্য দেয়া যাচ্ছে না’ বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘বহু বছর ধরে বিমা খাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। যে কারণে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে কখনও কখনও কোম্পানিগুলো তথ্য গোপন করতে চায়। আর কখনও কখনও ব্যবসায়িক অবস্থা নাজুক কিংবা দায়িত্বশীল লোকবলের অভাবেও সময়মতো তথ্য দেয়া যায় না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সক্রিয় হলে কোম্পানিগুলো নিয়মের মধ্যে আসতে বাধ্য হবে।

এদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বিমা করপোরেশন ও সাধারণ বিমা করপোরেশনও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশ মেনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ‘আইআইএমএস’ ও ‘এএলও’ মডিউল মেনে চলা শুরু করেনি। পাঁচ বছরে বহু চেষ্টা হলেও রহস্যজনক কারণে দুই কোম্পানিকে ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়ায় আনতে পারেনি বিউনিক। যে কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত দুই কোম্পানির ব্যবসা, এজেন্ট, কমিশন-ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার প্রশ্নে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থাই অন্ধকারে রয়েছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিমা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কাজ করছে বিউনিক। যার অংশ হিসেবে বিদ্যমান আইন-নীতিমালা পরিপালনে জোর দেয়া হয়। কোম্পানিগুলো আইন মানছে কি নাÑ তা পর্যবেক্ষণের জন্য ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সে কারণেই কোম্পানিগুলোকে ‘আইআইএমএস’ ও ‘এএলও’ মডিউল মেনে তথ্য দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত দুটি কোম্পানিসহ এক ডজন জীবন ও সাধারণ বিমা কোম্পানি বিউনিককে কোনো তথ্য দিচ্ছে না। যে কারণে কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক অবস্থা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বিদ্যমান নিয়ম মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট সাঈদ আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিমা খাতের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। তাই এ খাতে স্বচ্ছতা আনতেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা কাজ করছে। আমরা বিদ্যমান আইন মেনেই ব্যবসা করতে চাই। কিন্তু কিছু কিছু কোম্পানির নিয়ম ভঙের কারণে পুরো বিমা সেক্টর নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ ছড়ায়। তাই কোম্পানিগুলোকে আইন পরিপালন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা পরিপালন বিষয়ে কোম্পানিগুলোকে আরেকটু সচেতন হতে হবে’।