Print Date & Time : 21 July 2025 Monday 12:25 am

বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে ব্যবস্থা নিন

‘বুড়িগঙ্গার ৪০% দূষণের কারণ ২৫১ পয়োনিষ্কাশন লাইন’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা অনেকের দৃষ্টি আকৃষ্ট করবে বলেই ধারণা। খবরে জানা যায়, দেশের সবচেয়ে দূষিত নদীগুলোর অন্যতম বুড়িগঙ্গার মাত্র ছয় কিলোমিটারের মধ্যে ২৫১টি পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি অপরিশোধিত বর্জ্য এসে মিশছে। এ নদীর দূষণের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশই হচ্ছে এসব পাইপলাইনের মধ্যে দিয়ে। সম্প্রতি রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি) পরিচালিত ‘ঢাকায় নদীর দূষণ পরিস্থিতি’ শীর্ষক গবেষণায় উঠে এসেছে, কামরাঙ্গীরচরের শেখ রাসেল স্কুল থেকে ফরাশগঞ্জ ব্রিজ পর্যন্ত ২৫১টি পাইপলাইনের মাধ্যমে অপরিশোধিত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। নদীর উত্তর তীরে (পুরান ঢাকা) ১৩৭টি ও দক্ষিণ তীরে (কেরানীগঞ্জের দিকে) ১১৪টি পয়োনিষ্কাশন লাইন পাওয়া গেছে।

আরডিআরসির চেয়ারম্যান জানান, ‘মাঠপর্যায়ে যাচাইয়ের মাধ্যমে পয়োনিষ্কাশনের সংযোগগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) মাঝেমধ্যেই অবৈধ অবকাঠামো ও স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করে। তবে অভিযান শুরুর পর প্রভাবশালী মহলের চাপে হঠাৎ অভিযান বন্ধ হয়ে যেত। ছয় বছর আগে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে চলা এক অভিযানে সংস্থাটি অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিতে পেরেছে। দখলদারিতে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিল রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। ওই সময় বিআইডব্লিউটিএ উচ্ছেদ অভিযানে যেসব অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে, তার মধ্যে দোতলা, তিনতলা, চারতলা ও পাঁচতলা ভবনও ছিল। অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া নিশ্চয়ই প্রশংসার্হ। সেই সঙ্গে প্রশ্ন থেকে যায়, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এসব স্থাপনা কীভাবে তৈরি করলেন? যারা এসব বেআইনি কাজ করেছেন, কেন তাদের বিরুদ্ধে স্থাপনা নির্মাণকালে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি? এটি স্বীকার করতে হবে, নদীর দুই পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিলেই নদী উদ্ধার হবে না, নদী উদ্ধার করতে হলে এর তলদেশে যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য জমা হচ্ছে, তার উৎস বন্ধ করতে হবে। নদীর স্রোত বাধাগ্রস্ত করার পাশাপাশি তলদেশে বর্জ্য ফেলে নদী ভরাট করা হয়।

এরপর দুই পাড়ে চলে দখলদারির মহোৎসব। বুড়িগঙ্গা নদীর আদি উৎসমুখ (ধলেশ্বরী থেকে বছিলা পর্যন্ত) কোনো না কোনোভাবে দখল ও ভরাট-প্রক্রিয়া চলমান আছে। ফলে বুড়িগঙ্গার দ্বিতীয় চ্যানেল মৃত্যুমুখে পড়েছে। বুড়িগঙ্গা নদী রক্ষায় সরকার বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। বেসরকারি সংস্থাগুলো আন্দোলন করেছে। উচ্চ আদালত বারবার নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতির খুব একটা হেরফের হয়নি। বুড়িগঙ্গার ৪০ শতাংশ দূষণের কারণ ২৫১ পয়োনিষ্কাশন লাইন, তারই প্রমাণ। বুড়িগঙ্গার তীরবর্তী কোনো কারখানা অপসৃত হয়নি। এসব কারখানা ও বসতবাড়ির পয়োনিষ্কাশন লাইন থেকে প্রতিদিন টনকে টন বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় পতিত হয়, তা পানিকে নিয়ত দূষিত করে চলেছে। বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে সরকার শূন্য সহনশীলতায় আশু ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।