নিজস্ব প্রতিবেদক:সারাদেশে এক দিনে ৭৫ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচিতে হাসপাতালে ভিড় নেই তেমন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে এ কর্মসূচির আওতায় সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকার টিকাদান কেন্দ্রে কভিড টিকার বুস্টার ডোজ দেয়া হচ্ছে।
ঢাকার কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, খুব বেশি মানুষ তৃতীয় ডোজ টিকা নিতে আসেননি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রথম দিন কাক্সিক্ষত লক্ষ্য পূরণ না হলে বিশেষ এই টিকাদান কর্মসূচির সময় আরও বাড়ানো হবে।
রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বুথের বাইরে কিছু লোক টিকার জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে সেখানে খুব বেশি ভিড় নেই।
টিকাদান কর্মসূচিতে যুক্ত সালাহ উদ্দিন নামে একজন স্বাস্থ্যকর্মী জানান, কুর্মিটোলা হাসপাতালে বেলা ১১টা পর্যন্ত ৯৬০ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। সালাহ উদ্দিন বলেন,
এখানে টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড় সবসময়ই থাকে। আজ একটু বেশি, তবে আগের ক্যাম্পেইনগুলো চলার সময় মানুষের যে চাপ দেখেছি, সে রকম নয়।
বনানীর একটি বায়িং হাউসের কর্মী মো. মামুন হোসেন জানান, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর করোনাভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছিলেন তিনি। মঙ্গলবার এসেছেন বুস্টার ডোজ নিতে। আসলে দুই ডোজ নেয়ার পর বুস্টার ডোজ নেয়ার তেমন আগ্রহ ছিল না। এ কারণে এতদিন নিইনি। ক্যাম্পেইন চলছে শুনে টিকা নিতে এলাম।
কুড়িল বিশ্বরোড এলাকার শিহাব উদ্দিনও এসেছেন বুস্টার ডোজ নিতে। গত মার্চে বুস্টার ডোজ নেয়ার জন্য এসএমএস পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মোবাইল থেকে এসএমএস ডিলিট হয়ে গিয়েছিল। আর টিকা নিতে কিছুটা অবহেলাও ছিল। ফলে এতদিন টিকা নিইনি।
রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কেন্দ্রে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪০ ডোজ টিকা দেয়া হয়। টিকা শেষ হয়ে যাওয়ায় দুপুর ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আধা ঘণ্টা বন্ধ থাকে টিকাদান। এ সময় টিকা নিতে আসা কয়েকজন অপেক্ষা করছিলেন।
বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন গত ২ ফেব্রুয়ারি। ৮ জুন বুস্টার নেয়ার তারিখ ছিল। কিন্তু ‘ব্যস্ততার কারণে’ সে সময় নেয়া হয়নি তার।
তিনি বলেন, নানা কাজে ব্যস্ত ছিলাম। এছাড়া আগের মতো এতটা ভয়ও নেই। ফ্রি হওয়ায় আজ এলাম। এই কেন্দ্রে টিকাদানের দায়িত্বে থাকা রীপা ইসলাম নামে এক সিনিয়র স্টাফ নার্স বললেন, টিকা নিতে আসা মানুষের সংখ্যা অন্যান্য দিনের চেয়ে কিছুটা বেশি, তবে আগের ক্যাম্পেইনের তুলনায় কম।
বুস্টার ডোজে মানুষের আগ্রহ কমে গেছে বলে মনে হয়। গণটিকার সময় প্রতিদিন হাজার-বারোশো ডোজ টিকা দিতাম। দুই ডোজ নেয়ার পর অনেকের আগ্রহ কমে গেছে, এছাড়া ঈদের ছুটির পর অনেকে এখনও ঢাকার বাইরে। এটা কারণ হতে পারে।
শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কেন্দ্রেও তেমন ভিড় দেখা যায়নি। ওই কেন্দ্রে বেলা ১টা পর্যন্ত ৫১০ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী তানিয়া আক্তার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টিকা কার্যক্রম পরিদর্শন করতে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বুস্টার ডোজে মানুষের ‘আগ্রহ কম’। তাই এখন পর্যন্ত ১৭ শতাংশ মানুষকে বুস্টার ডোজ দেয়া গেছে।
সামনে করোনাভাইরাসের যে কোনো ঢেউ মোকাবিলায় আরও বেশি মানুষকে বুস্টার ডোজ দিতে এই ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছে। বুস্টারের পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজের টিকাও দেয়া হচ্ছে। এক দিনে ৭৫ লাখ মানুষকে টিকা দিতে না পারলে এই ক্যাম্পেইন আগামী আরও দু-এক দিন চলবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এক দিনে ৭৫ লাখ ডোজ টিকা দেয়ার এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। দেশে গত রোববার পর্যন্ত ১২ কোটি ৯৪ লাখ ৩৮ হাজারের বেশি মানুষ টিকার অন্তত এক ডোজ পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হয়েছে ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৮৬ হাজার এবং বুস্টার ডোজ পেয়েছেন তিন কোটি পাঁচ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি মানুষ।