বুড়িমারী স্থলবন্দরের ১৬ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি

প্রতিনিধি, লালমনিরহাট : বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে একসাথে বদলি করা হয়েছে।

আজ বুধবার বদলিকৃত ১৬ কর্মকর্তাকে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বুড়িমারী স্থলবন্দরের প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বদলি-সংক্রান্ত এ আদেশের কপি পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

বুড়িমারী স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, ঢাকা কার্যালয়ের পরিচালক ডিএম আতিকুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি বদলির আদেশ জারি করা হয়।

বদলির আদেশে বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) রুহুল আমিন, ট্রাফিক পরিদর্শক জাহিদুর রহমান, হিসাবরক্ষক আদনান খালিদ বসুনিয়া ও ক্যাশিয়ার ভ্রমর কুমার সরকারকে কুড়িগ্রাম জেলার সোনাহাট স্থলবন্দরে বদলি করা হয়।

ট্রাফিক পরিদর্শক সালাউদ্দিনকে ফেনী জেলার পরশুরাম বিলোনিয়া স্থলবন্দরে, ট্রাফিক পরিদর্শক শাহিন মাহমুদ ও আমিনুল হককে ময়মনসিংহ জেলার গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দরে, ওয়্যার হাউস সুপারিনটেনডেন্ট মানিকুর রহমানকে ফেনী জেলার বিলোনিয়া স্থলবন্দরে, একই পদের মিনহাজ উদ্দিন, হারুন অর রশিদ, আবুল বাশার ও কম্পিউটার অপারেটর হাসমত উল্লাহকে যশোর জেলার বেনাপোল স্থলবন্দরে, ওয়্যার হাউস সুপারিনটেনডেন্ট মাছুদ রানাকে দিনাজপুর জেলার হিলি স্থলবন্দরে, একই পদের ফিদা হাসানকে পঞ্চগড় জেলার বেনাপোল ও এসএম মাসুম বিল্লাহকে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় স্থলবন্দরে এবং অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সেলিম রেজাকে শেরপুর জেলার নাকুগাঁও স্থলবন্দরে বদলি করা হয়।

আদেশে বদলিকৃতদের আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়। একই তারিখে উল্লিখিত স্থলবন্দরগুলো থেকে পদায়ন করা ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে যোগ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।

এক সাথে ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, শ্রমিক, আমদানিকারক ও বন্দর ব্যবহারকারীদের নাম উল্লেখ করে বুড়িমারী স্থলবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নানা অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির একটি লিখিত অভিযোগ এ বছরে দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো হয়েছিল।
অভিযোগে বলা হয়েছিল, অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভারতীয় ট্রাক থেকে ওজন স্টেশনে অবৈধভাবে টাকা আদায়, খাদ্যশস্যের ট্রাক থেকে টাকা গ্রহণ, বিল শাখায় জালিয়াতি করে সরকারি রাজস্ব আত্মসাৎ, আগত পণ্যবাহী গাড়ি ও ওজনের গাড়ির গরমিল, রাত্রিকালীন ট্রাক চার্জ জমা না দিয়ে আত্মসাৎ, ১ থেকে ২ দিনের ছুটি নিয়ে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে না থাকা, ভুয়া চালান করা, ওজন স্কেলে পণ্যের ওজন কম দেখিয়ে টাকা আদায়, বহিরাগতদের নিয়ে কর্মস্থলে আড্ডা দেয়াসহ নানা অপকর্মে যুক্ত। এসব করে তারা কোটি কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব লুটতরাজ করেছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, শ্রমিক, আমদানিকারক ও বন্দর ব্যবহারকারীদের নাম উল্লেখ করে দেয়া অভিযোগে তাদের স্বাক্ষর না থাকলেও দুর্নীতি দমন কমিশন বিভিন্নভাবে এ অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়।

গত ৭ আগস্ট অভিযোগের কপি বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠায় দুর্নীতি দমন কমিশন। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ১৪ আগস্ট অভিযোগের কপি হাতে পেয়ে ১৬ আগস্ট অভিযোগ আমলে নেয়। এরপরে ১১ দিনের মাথায় এ বদলির আদেশ দিলো স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা বলেন, যারা বদলি হয়েছেন, তারা দীর্ঘদিন থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে চাকরি করছিলেন। অর্থের বিনিময়ে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী বন্দরের কিছু ব্যবসায়ীকে বিভিন্নভাবে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা দিতেন। তাদের বদলির আদেশে আমরা খুব খুশি।