প্রতিনিধি, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ): তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি দিয়ে অবশেষে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় নামল স্বস্তির বৃষ্টি। খরতাপে দগ্ধ হাওর জীবনে চৈত্রের বৃষ্টিতে স্বস্তি মিলেছে কৃষকদের। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত বহু দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভিজিয়ে গেল গোটা হাওরাঞ্চলের ফসলি জমি। দীর্ঘদিন তাপপ্রবাহ থাকার পর এই বৃষ্টির ছোঁয়ায় মুহূর্তেই মেতে ওঠেন কৃষকরা। এ বৃষ্টির ফলে বোরো ধান, শাকসবজি, আম, কাঁঠাল ও অন্যান্য ফলের ব্যাপক উপকার হবে বলে কৃষকদের মনে উল্লাস।
জানা যায়, দোয়ারাবাজার উপজেলার ছোট-বড় হাওরগুলোতে পুরোদমে চলছে বোরো ফসল আবাদ। কিন্তু শুকনো মৌসুম হওয়ার কারণে পানির সংকট ছিল। অনেক দূর থেকে মেশিনের মাধ্যমে পানি নিয়ে আসতে হতো কৃষককে। এসব কারণে ধান উৎপাদনে কৃষকের ব্যয় বাড়তে থাকে। তাই এতদিন পানির জন্য ছিল হাহাকার। বৃষ্টির খুব প্রয়োজন ছিল। দোয়ারাবাজার উপজেলার কৃষক পরিবারগুলোর আকুতি ছিল যেন দ্রুত বৃষ্টি হয়। তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি দিয়ে অবশেষে দেখা মিলেছে বৃষ্টির। হঠাৎ বৃষ্টিতে দোয়ারাবাজার উপজেলায় নামল স্বস্তির হাওয়া। খরতাপে দগ্ধ হাওর জীবনে চৈত্রের বৃষ্টিতে স্বস্তি মিলেছে কৃষকদের মাঝে। বুধবার রাত ১১টায় বহু দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভিজিয়ে গেল গোটা উপজেলার ফসলি জমি। এছাড়া বৃষ্টি হলে শ্যালো মেশিন বা বৈদ্যুতিক পানির পাম্প দিয়ে আর পানি দিতে হয় না। এতে করে কৃষকের বেঁচে যাবে তেল ও বিদ্যুৎ খরচ। ব্যয় কমবে কাজের। সারারাত থেমে থেমে কয়েক দফায় বৃষ্টি হওয়ায় মেশিন দিয়ে জমিতে পানি দিতে হয়নি কৃষকদের। এ জন্য শ্রম ও টাকা সাশ্রয় হচ্ছে তাদের।
উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল করিম জানান, পানির অভাবে বোরো ধান নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। রাতের হঠাৎ বৃষ্টিতে জমি পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। এতে আমরা অনেকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছি। আশা করি, ফসলও ভালো হবে।
বাংলাবাজার ইউনিয়নের কৃষক নুর মোহাম্মদ জানান, সেচের ব্যবস্থা না থাকায় গ্রামের পুকুর থেকে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে পানি এনে জমিতে দিতাম, খরচ বেশি হতো। এতে বোরে ধানের চাষ নিয়ে হতাশায় ভুগছিলাম। বুধবার রাতের হঠাৎ বৃষ্টিতে আমাদের উপকার হবে। বাড়তি খরচ গুনতে হবে না। ফসলও ভালো হবে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী বলেন, উপজেলার হাওরাঞ্চলের ইরি, বোরো কৃষকরা বৃষ্টির অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন। সময়মতো স্বস্তির বৃষ্টি হওয়ায় ইরি, বোরো ধান, শাকসবজি ও ফল চাষিদের ব্যাপক উপকার হবে। এবার ধান ও ফলচাষিদের বাম্পার ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মহসিন আলী জানান, এ সময়ের বৃষ্টির জন্য কৃষকরা অপেক্ষায় ছিলেন। বুধবার রাতের বৃষ্টিতে পাট, ইরি-বোরো ধান, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফলের খুব উপকার হবে। সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় এবার বাম্পার ফলনের আশা আছেন কৃষকরা।