বৃষ্টির পানিতে ফতুল্লায় সড়কে চলছে নৌকা

প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ : ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভারী বৃষ্টির ফলে কৃত্রিম জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে। এসব এলাকার বেশিরভাগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বসতবাড়িতে প্রবেশ করেছে ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত পানি। সড়কে রিকশা ও গাড়ির পরিবর্তে চলছে নৌকা। ভারী বর্ষণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় স্থবিরতা নেমে এসেছে এসব এলাকায়। স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে গতি হারিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন কয়েক লাখ মানুষ।

ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টি পানি চলাচলের রাস্তা ছাপিয়ে বাড়ির আঙিনা ও মানুষের বসতঘরে প্রবেশ করেছে। কোথাও হাঁটু, কোমর কিংবা বুকসমান পানি জমে। চলাচলের সড়কে রিকশার বদলে চলছে ভ্যান ও নৌকা। অনেকে আবার বৃষ্টির পানি মারিয়ে জীবিকার টানে ছুটে যাচ্ছেন কর্মস্থলে। টানা বর্ষণে বসতঘরে পানি প্রবেশ করার নিরাপদে আশ্রয় নিচ্ছেন অনেক বাসিন্দা।

এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে স্থায়ী সমাধান চান ডিএনডিবাসী। তবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বুধবার বিকালে ফতুল্লায় পানিবন্দি এলাকা পরিদর্শনে এসে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এ সমস্যা কয়েক দিনের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ চলছে।

ফতুল্লার লালপুর পৌষাপুকুরপাড় সড়কে রিকশার পরিবর্তে ভ্যান ও নৌকা চলতে দেখা গেছে। এই সড়কের দুপাশে কয়েক লাখ মানুষের বসবাস। পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে আছে এসব এলাকার মানুষ। মানুষের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। শুধু এই এলাকায়ই নয়, পার্শ^বর্তী ইসদাইর, গাবতলী, তাগারপার, আজমেরীবাগ, সস্তাপুর, লালখা, রামারবাগ, কোতালেরবাগ, সস্তাপুর এলাকা জুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে,  কুতুবপুরের দৌলতপুর, আদর্শনগর ও মুন্সীবাগ এলাকার বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে।

এসব এলাকার মানুষ কয়েক দিন ধরে পানি বন্দি জীবনযাপন করছে। বাড়ির আঙিনা, রান্নাঘর, টিউবওয়েল ও বাথরুম পানির নিচে তলিয়ে আছে। এখানেই শেষ নয়, এসব এলাকার অনেক বাসিন্দা এই ভোগান্তি থেকে রেহাই পেতে নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কৃত্রিম জলাবদ্ধতার ফলে প্রভাব পড়েছে এলাকার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডেও।

ফতুল্লার কুতুবপুর ইউনিয়নের প্রায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের শহীদ নগর, দৌলতপুর, মুন্সিবাগ, আদর্শ নগর, নূরবাগ, পিলকুনী, তক্কার মাঠসহ আশপাশের প্রায় বেশ কয়েকটি গ্রাম টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পানিতে। ঘরবন্দি জীবনযাপন করেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। কুতুবপুর ইউনিয়ন সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। ড্রেন ব্যবস্থা না থাকার কারণে অল্প সময়ে তলিয়ে যায় অধিকাংশ রাস্তাঘাট। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

ডোবা-নালা ভরাট হয়ে বৃষ্টির পানি মানুষের বসতবাড়ি ও ঘরে প্রবেশ করেছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে সিদ্ধিরগঞ্জের অনেক এলাকায়। নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে ময়লা পানিতে। মিজমিজি এলাকায় গিয়ে মানুষের বসতবাড়িতে পানি দেখা গেছে। ময়লা পানিকে সঙ্গী করেই এই এলাকার মানুষের বসবাস। গত দুদিনের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে কেউ কেউ আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বেড়িবাঁধের ভেতরের এসব এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে বৃষ্টির পানি বেরিয়ে যেতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকায় বছরের বেশিরভাগ সময় এসব এলাকার কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা থাকে। দুদিনের বৃষ্টির কারণে এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

জলাবদ্ধতার খবরে এলাকাবাসীর কাছ ছুটে আসেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনি বলেন, ‘ফতুল্লার লালপুর এলাকা ফতুল্লার হাট। এখানে এলাকার মানুষের কিছু ব্যর্থতা আছে। সে ব্যর্থতা হচ্ছে রাস্তা উঁচু, জায়গাটা নিচু। সে কারণে প্রায় তিন লাখ মানুষ এখানে পানিবন্দি হয়ে আছেন। গতবার আমরা জেলা পরিষদের সহায়তায় তিনটি পাম্প বসিয়েছিলাম। প্রায় অর্ধকোটি টাকার ওপরে খরচ হয়েছিল। এখানে একটা টান্সফর্মার ছিল। টান্সফর্মার খুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ কারণে এবার প্রচুর পানি জমে গেছে। বাড়ি-ঘর ছাড়াও বাথরুমের ময়লা মসজিদ-মন্দিরে গিয়ে প্রবেশ করেছে। এজন্য আমি দুঃখিত ও লজ্জিত।’

‘আমি সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই। এখানে ৩১৫ কিলোওয়াটের ট্রান্সফর্মার লাগে। এটা ছিল এখানে, খুলে নেয়া হলো কেন? এখান থেকে ৯০ লাখ টাকা বকেয়া বিল আছে। এগুলো পরিশোধ হয়নি, কে পরিশোধ করবে? ইউনিয়ন পরিষদ বা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ৩১৫ কিলোওয়াটের ট্রান্সফর্মার না হলে তিনটা পাম্প চালানো যাবে না,’ বলেন তিনি।

নতুন ট্রান্সফর্মার নিজের টাকায় কিনে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘পরবর্তী বিলগুলো আমরা দেয়ার চেষ্টা করব। তবে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য এলজিআরডির সহযোগিতা লাগবে। আগামীকালের মধ্যে টান্সফরমার কেনার জন্য টাকা দিয়ে দিচ্ছি। আশা করি আগামী দু-তিন দিনের মধ্যে পানি নামিয়ে ফেলতে পারব।’