Print Date & Time : 27 August 2025 Wednesday 9:05 pm

বেতন বৃদ্ধি নিয়ে অর্থমন্ত্রী: মূল্যস্ফীতি কম হলে বেতন বাড়বে না

 

 নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন প্রতিবছর বাড়বে না। কোনো বছর যদি মূল্যস্ফীতির হার পাঁচ শতাংশের কম হয়, তাহলে সে বছর কোনো ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হবে না। মূল্যস্ফীতি পাঁচ শতাংশের বেশি হলেই কেবল বেতন সমন্বয় করা হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি চাকুরেদের বেতন-ভাতা নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। আগামী তিন মাসের মধ্যে গঠিত এ কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে।

গতকাল রোববার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী বেতন কমিশন গঠনের পরিবর্তে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি চাকুরেদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ-সংক্রান্ত এক বৈঠকে এ কমিটি গঠন করা হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন প্রতিবছর বাড়বে, সে ধারণা ঠিক নয়। মূল্যস্ফীতি পাঁচ শতাংশের বেশি হলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার বিষয়টি বিবেচিত হবে, এটি আগেই নির্ধারিত। যদি মূল্যস্ফীতি পাঁচ শতাংশ না হয়, তবে কোনো ইনক্রিমেন্ট হবে না। মূল্যস্ফীতি পাঁচ শতাংশের বেশি হলে বেতন সমন্বয় করা হবে। ফলে কোনো বছর বেতন বাড়বে, আবার কোনো বছর বাড়বে না।’

সম্প্রতি একাধিক গণমাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ফের বাড়ছে বলে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘ইট ইজ টোটালি ফলস। মোটেই আরেক দফা ইনক্রিমেন্টের কোনো ব্যবস্থা আমরা করছি না এ মুহূর্তে। তবে আগামী নির্বাচনের আগে ২০১৮ সাল থেকে অষ্টম পে-স্কেল অনুযায়ী মূল্যস্ফীতির ওপর নির্ভর করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সমন্বয় করা হবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠকে নতুন নিয়ম অনুযায়ী মূল্যস্ফীতির ওপর ভিত্তি করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সমন্বয় করার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি চাকুরেদের বেতন-ভাতা নির্ধারণের উপায় খুঁজতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের (সমন্বয় ও সংস্কার) নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট দেওয়ার পর আমরা আরও চিন্তা করব। তবে স্থায়ী পে-কমিশন আর থাকবে না। গত বেতন কমিশনে আমরা বলেছি, আর ভবিষ্যতে বেতন কমিশন হবে না। সো উই অলসো প্রমিজ, একটা অল্টারনেটিভ সিস্টেম করতে হবে, যাতে অটোমেটিক্যালি ইনফ্লেশন ফ্যাক্টর ইজ টেকেন কেয়ার।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের বর্তমানে যে সিস্টেম সেখানে ইনক্রিমেন্ট হয় পাঁচ শতাংশ হারে। আলোচনা হয়েছে, কিন্তু সিদ্ধান্ত হয়নিÑযদি ইনফ্লেশন চার শতাংশ হয়, তার মানে কি বেতন বাড়বে না? যখন ছয় শতাংশ হবে, তখন কি বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি দেখতে হবে? এসব কিছুই ওই ছোট কমিটি দেখবে।’

বৈঠকে ইনক্রিমেন্ট নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে মুহিত বলেন, ‘নো ইস্যু অব অ্যানাদার ইনক্রিমেন্ট, নো। এটা হচ্ছে ভবিষ্যৎ কীভাবে হবে। যেমন ২০১৭ সালে অনেক কিছু দাম বাড়বে। পণ্য মূল্যের ক্ষেত্রে ২০১৬ সালের সঙ্গে ২০১৭ সালের ভিন্নতা আছে। সো তাতে কিছু দেওয়া হতে পারে।’

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৮ জুলাই সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার এবং সর্বনি¤œ ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল ধরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদন করে সরকার। এতে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে যোগ দেওয়া একজন চাকরিজীবীর মূল বেতন হয় মাসে ২২ হাজার টাকা, যা আগের কাঠামোতে ১১ হাজার টাকা ছিল। এর সঙ্গে যুক্ত হবে এলাকা অনুযায়ী বাড়িভাড়া এবং গ্রেড অনুযায়ী চিকিৎসা ও অন্যান্য ভাতা। প্রায় ২১ লাখ সরকারি চাকরিজীবী এই হারে মূল বেতন পাচ্ছেন ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে। আর ২০১৬ সালের ১ জুলাই থেকে ভাতা কার্যকর হয়েছে।

এদিকে অষ্টম বেতন কাঠামোতে সর্বোচ্চ স্কেলের মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের মূল বেতন ৮৬ হাজার টাকা এবং জ্যেষ্ঠ সচিবদের বেতন ৮২ হাজার টাকা। সপ্তম বেতন কাঠামোতে তাদের মূল বেতন ছিল যথাক্রমে ৪৫ হাজার ও ৪২ হাজার টাকা।