Print Date & Time : 7 July 2025 Monday 10:51 am

বেনাপোল কাস্টমসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়

প্রতিনিধি, বেনাপোল: দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমে গেছে। তবে আমদানি কমলেও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে । রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দু-দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রভাব পড়েছে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে ।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারী) ৮ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেনাপোল দিয়ে পণ্য আমদানি কমেছে ১৯ হাজার ২০ দশমিক ৮২ মেট্রিক টন। তবে পন্য আমদানি কমলেও চলতি অর্থবছরের ৮ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০৮.৬১ কোটি টাকা বেশী রাজস্ব আদায় হয়েছে । এছাড়া রপ্তানি বানিজ্যের ক্ষেত্রে অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রপ্তানি পণ্যর পরিমান বিগত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমলেও রপ্তানি পন্যের মূল্য ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ।

এ বন্দরে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে শিল্পকলকারখানার কাঁচামাল, তৈরি পোশাক, গার্মেন্টস, শিশু খাদ্য, মাছ, কেমিকেলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। আর রফতানি পণ্যের মধ্যে পাট,পাটের তৈরি পণ্য, গার্মেন্টস, তৈরি পোশাক, কেমিকেল, টিস্যু পেপার, মেলামাইন ও মাছ উল্লেখযোগ্য। দেশের মোট ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য হয় ১৬ টি বন্দরের। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় বেনাপোল – পেট্রাপোল বন্দরের মধ্যে।

বন্দর সুত্রে জানা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারী) প্রথম ৮ মাসে ভারত থেকে মোট ২৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৯ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই-ফেব্রুয়ারী) প্রথম ৮ মাসে মোট ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৭১ মেট্রিক টন পন্য রপ্তানি হয়েছিল। যা গত অর্থবছরের তুলনায় একই সময়ে ২০ হাজার ২’শ ৭১ মেট্রিক টন পণ্য কম রপ্তানি হয়েছে। তবে রপ্তানি কম হলেও রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ।
২০২৪-২৫ অর্থ বছরের (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারী) প্রথম ৮ মাসে ভারত থেকে মোট ১১ লাখ ৩৩ হাজার ৭৪৬ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই-ফেব্রুয়ারী) প্রথম ৮ মাসে মোট ১১ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৭ দশমিক ২৯ মেট্রিক টন পন্য আমদানি হয়েছিল। যা গত অর্থবছরের তুলনায় একই সময়ে ১৯ হাজার ২০ দশমিক ৮২ মেট্রিক টন কম আমদানি হয়েছে।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, পণ্য আমদানি কমলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২০৮.৬১ কোটি টাকা বেশী রাজস্ব আদায় হয়েছে । বেনাপোল কাস্টম হাউসে চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬,৭০৫ কোটি টাকা। সেই আলোকে অর্থবছরের প্রথম আট মাসে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪,৪৫৩.৩১ কোটি টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৪,৬৬১.৯২ কোটি টাকা। যার মধ্যে জুলাই মাসে ৪১৩.২২ কোটি টাকা,আগষ্ট মাসে ৪০১.৫৫ কোটি টাকা সেপ্টেম্বর মাসে ৪৮৯.১১ কোটি টাকা,অক্টোবর মাসে ৫২৪.৬৩ কোটি টাকা,নভেম্বর মাসে ৬১৪.৭১,ডিসেম্বর মাসে ৭৭৮.৯৫ কোটি টাকা,জানুযারী মাসে ৬২১.৬৩ কোটি টাকা ও ফেব্রুয়ারী মাসে ৮১৮.০৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী আমিনুল হক আনু বলেন, দেশে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পরে দু-দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েন থাকার কারনে ভারত থেকে আমদানি কিছুটা কমলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেশিরভাগ আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী। তবে বেনাপোল কাষ্টম্স কর্তৃপক্ষ রাজস্ব ফাঁকিরোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় অসাধু ব্যাবসায়ীরা বিপাকে পড়েছে।

বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ মহসিন মিলন জানান, অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহনের পর বাণিজ্য সম্প্রসারণে নানান উদ্যোগ নিয়েছে। গত দুই মাসে বেনাপোল বন্দরের শূন্য রেখায় চালু করা হয় বন্দর কার্গোভেহিকেল টার্মিনাল ও বন্দরে বসানো হয় স্ক্যানিং মেশিন। দ্রুত পণ্য খালাস ও বাণিজ্য সম্প্রসারণে জাতীয় রাজস্ব বোডের্র উদ্যোগে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব ফাঁকিরোধে ও বানিজ্য সহজীকরনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। এতে বর্তমানে বাণিজ্যে অনেকটা গতি ফিরে হয়রানি কমেছে। যা সামনের দিনে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখবে।

তিনি আরও জানান, বিগত সৈরাচার হাসিনা সরকারের শেষ সময়ে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাওয়া যাচ্ছিল না। এ কারণে সেসময় পর্যাপ্ত এলসি খোলা সম্ভব ছিল না। কিন্তু বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়িত নেওয়ার পর ধীরে ধীরে ডলার সংকট কেটে গেছে। এখন আর আমদানি কারকদের এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে না।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. শামীম হোসেন জানান, ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসার ঘটানোর জন্য বেনাপোল স্থলবন্দরের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক বন্দর খোলা রাখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। সপ্তাহে ৭দিন ২৪ ঘন্টা বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড এবং আমদানি-রপ্তানি কার্য্যক্রম চালু রাখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বন্দরে নতুন করে অবকামো উন্নয়নের কাজ চলছে। এসব কাজ শেষ হলে বানিজ্য সম্প্রসারণে বড় ভুমিকা রাখবে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান জানান, বৈধ আমদানি-রপ্তানি বানিজ্য সহজীকরণের জন্য সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্য্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে। এতে বেনাপোলে সার্বিক আমদানি কমলেও রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ফেব্রুয়ারী/২০২৫ পর্যন্ত ২০৮.৬১ কোটি টাকা বেশী আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। এরুপ পরিস্থিতি বিরাজ করলে অর্থবছর শেষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। এছাড়া রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রপ্তানি পণ্যের পরিমান ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ কমলেও রপ্তানি পণ্যের মূল্য ২৮ দশমিক ০৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।