নিজস্ব প্রতিবেদক: এক বছর আগে শতভাগ রপ্তানিমুখী ডেনিম প্রস্তুতকারী কোম্পানি রয়্যাল ডেনিম লিমিটেডের মালিকানা অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি ুুআলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এ ঘোষণায় আলিফের প্রতি শেয়ারের দাম উঠেছিল সর্বোচ্চ ১৩৮ টাকা, যা এখন ৬১ টাকা ২০ পয়সা। অপরদিকে বেপজা ও শ্রমিকের বকেয়া পাওনার দায়ে চার বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া রয়েল ডেনিমের স্থাপনা, মেশিনারিজ ও মালামাল নতুন ক্রেতার কাছে বরাদ্দ দেয়ার জন্য নিলাম দরপত্র আহ্বান কুমিল্লা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ। এ ঘোষণায় বেকায়দায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড শতভাগ রপ্তানিমুখী ডেনিম প্রস্তুতকারী কোম্পানি রয়েল ডেনিম লিমিটেড ও ড্রেজিং কোম্পানি ডায়মন্ড ড্রেজিং লিমিটেডের মালিকানা অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এ তথ্য বিনিয়োগাকারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানান।
তথ্য অনুসারে, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আজিমুল ইসলামকে সংশ্লিষ্ট বিধিমালা মেনে রয়েল ডেনিমের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমোদন দিয়েছে পর্ষদ। রয়েল ডেনিমের প্রতি মাসে সাড়ে সাত লাখ ইয়ার্ড ডেনিম তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। কারখানাটি কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) অবস্থিত। কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়। এছাড়া পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য এমডি আজিমুল ইসলামকে কোম্পানি দুটির প্রাসঙ্গিক সব নথিপত্রসহ সম্ভাব্যতা যাচাইসংক্রান্ত প্রতিবেদন, অধিগ্রহণের আনুমানিক খরচ ও অর্থায়নের পদ্ধতি ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে পর্ষদের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু গত এক বছরের অধিগ্রহণের তেমন অগ্রগতি কোম্পানি বিনিয়োগাকারীদের কাছে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ বলতে পারেনি। উল্টো দেনার দায়ে চার বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া রয়েল ডেনিমের স্থাপনা, মেশিনারিজ আগ্রহী ক্রেতার কাছে আগামী নিলামে বরাদ্দ দেয়ার জন্য কুমিল্লা ইপিজেড কর্তৃপক্ষ নিলামে দরপত্র আহ্বান করে। ইপিজেট কর্তৃপক্ষ জানান, আগামী ৭ মার্চ আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে শর্ত পূরণ হলে বরাদ্দ দেয়া হবে। এ ঘোষণায় বেকায়দায় আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও রয়েল ডেনিমের সাধারণ বিনিয়োগাকারীরা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, রয়েল ডেনিম ২০১৩ ও ২০১৪ সালে ৪ কোটি ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০টি পেইসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে। এসব শেয়ার ফার্স্ট সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড, হেরিটেজ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, এনআরবি ইক্যুইট, রহিমা হোসাইন, পিজুস সাহা, মীর হাসান আলী, সাদিয়া পারভীন, আফসারউজ্জামান, মো. মিজানুর রহমান, দিপালী চৌধুরীসহ ৬০টির বেশি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে এসব শেয়ার বিক্রি করা হয়েছিল। পরে পুঁজিবাজারে তালিকভুক্তির আবেদনই করেনি প্রতিষ্ঠানটি, আবার বছরের পর বছর পেইসমেন্টধারী বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশও দেয়নি। এখন অনেকটা আড়ালে রয়েছে কোম্পানিটি। নেই পেইসমেন্টধারীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ। ফলে যারা প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনেছিলেন তারা বিপাকে পড়েছেন। এখন তারা না পাচ্ছেন প্লেসমেন্টের টাকা ফেরত, না পাচ্ছেন লভ্যাংশ। ফলে প্লেসমেন্ট শেয়ার এখন তাদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, রয়েল ডেনিম ২০১৩ ও ২০১৪ সালে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হবে বলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ৪ কোটি ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০টি প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করে। অর্থাৎ ৪০ কোটি টাকারও বেশি টাকা বিনিয়োগাকারীদের কাছ থেকে নেয়। এর বহু বছর পর গত বছরের আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ রয়েল ডেনিম অধিগ্রহণের ঘোষণা দেয়। কিন্তু কীভাবে তারা এ ঘোষণা দেয় তা বোধগম্য না। আর নিতে হলে অবশ্যই বিনিয়োগকারীদের নিয়ে ইজিএম করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর প্রতিষ্ঠান তো চার বছর ধরে বন্ধ। এ বন্ধ প্রতিষ্ঠান কীভাবে আলিফ নেবে? রয়েল ডেনিমের উদ্যোক্তা চরম প্রতারক। তারা একবার প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করল, আবার আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের কাছে বিক্রিয়ের পাঁয়তারা করছে। বিএসইসির উচিত পুরো বিষয়টি তদন্ত করা। এছাড়া আলিফ যখন রয়েল অধিগ্রহণে ঘোষণা দেয়, তখন শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ ১৩৮ টাকা হয়েছিল। এখন শেয়ারের দাম ৬১ টাকা। আবার অধিগ্রহণ করা কোম্পানি কীভাবে বেপজা নিলামে বিক্রির ঘোষণা দেয়। এসব বিষয় নিয়ে বিএসইসির উচিত নিবিড় তদন্ত করা।
রয়েল ডেনিম অধিগ্রহণের আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের বিষয়ে কুমিল্লা ইপিজডের নির্বাহী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহবুব শেয়ার বিজকে বলেন, কুমিল্লা ইপিজেডে থাকা রয়েল ডেনিম লিমিটেড গত চার বছর ধরে উৎপাদন বন্ধ আছে। তখন ছয় মাসের শ্রমিকদের বেতন এবং আমাদের ইপিজেডের বকেয়া প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা আছে। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটিকে টারমিনেট করা হয়েছে। এখন আগামী মাসের শুরুতে নতুন করে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়ার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি। তবে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের অধিগ্রহণের বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। কারণ আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ আমাদের এ বিষয়ে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি। এমন কি রয়েল ডেনিম এসব বিষয়ে আমাদের কোনো কিছুই জানাইনি।
এ বিষয়ে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিমুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, আমাদের সাথে রয়েল ডেনিমের সঙ্গে এমওইউ আছে। আমরা সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল, রয়েল ডেনিম অধিগ্রহণে কমিশনে বন্ডের জন্য আবেদন করেছিলাম। সেই বন্ড এখনও হয়নি। এর মধ্যে দেশের সরকার পরিবর্তন হয়ে গেল। এতে অনেক প্রক্রিয়া সেøা হয়ে যায়। তবে আমরা বসে নেই। আমাদের কাজ আমরা করছি। আমরা ৩২ কোটি টাকা সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলে বিনিয়োগ করে কোম্পানি একটিভ রাখছি। আর রয়েল ডেনিম নিয়েও আমরা কাজ করছি। হয়ত রয়েল ডেনিমের উদ্যোক্তাদের ওপর বেপজা কর্তৃপক্ষ নাখোশ, তাই হয়ত তাদের চাপে রাখার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে বেপজার নিলাম স্থগিত করা জন্য আমরা রিট করছি। আশা করছি, ভালো কিছু হবে।
অপরদিকে রয়েল ডেনিমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল হোসাইনের ব্যবহƒত মুঠোফোন নম্বরে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলে তিনি সংযোগটি রিসিভ করেননি। ফলে উনার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। উল্লেখ, ২০১৭ সালে তালিকাভুক্ত আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের অনুমোদিত মূলধন ৪০০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৪৪ কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ২০২৪ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে উদ্যোক্তাদের শেয়ার ধারণে কমেছে ৩ দশমিক ১১ শতাংশ। এছাড়া ২৭ দশমিক ১৬ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক ও বাকি ৪২ দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।