Print Date & Time : 12 September 2025 Friday 3:27 am

বেল্ট অ্যান্ড রোডের দেশগুলোয় ২৪ হাজার কোটি ডলার ঋণ চীনের

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বেল্ট অ্যান্ড রোডের দেশগুলোয় ২০০৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ২৪০ বিলিয়ন (২৪ হাজার কোটি) ডলার ঋণ দিয়েছে চীন। উন্নয়নশীল ২২টি দেশকে অর্থনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধারে এ ঋণ দেয় চীন। খবর: সিএনএন।

এশিয়া থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত উদীয়মান বাজারগুলোয় চীনের প্রভাব বৃদ্ধি করাই চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। ২০১০-এর দশকে বিআরআই বাস্তব গতি পায়। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ভাষায়, বিআরআই এ শতাব্দীর প্রকল্প। অর্থাৎ চীনকে কেন্দ্রে রেখে বিশ্বব্যবস্থার ধারা বদলে দেয়াই এর উদ্দেশ্য।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এর আওতায় সহায়তার পরিমাণ আগের তুলনায় বেড়েছে। কিন্তু ঋণ নিয়ে বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের স্থাপনা বানানোয় তৎপর অনেক দেশের পক্ষে এখন ঋণ পরিশোধ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত পশ্চিমা এক গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।

এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক, হার্ভার্ড কেনেডি স্কুল কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইডডেটা। ওই প্রতিবেদন বলা হয়েছে, চীনের এ ঋণের প্রায় ৮০ শতাংশ দেয়া হয়েছে ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে। এ ঋণের বেশিরভাগ পেয়েছে আর্জেন্টিনা, মঙ্গোলিয়া ও পাকিস্তানের মতো মধ্য আয়ের দেশগুলো।

অবকাঠামো নির্মাণে চীন উন্নয়নশীল দেশগুলোকে হাজার হাজার কোটি ডলার দিলেও অনেক প্রকল্প প্রত্যাশিত লাভের মুখ দেখেনি। এ কারণে বেইজিং ঋণ দেয়ার পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে এনেছে। বিআরআই প্রকল্পের মান নিয়ে বেশ কয়েকটি দেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল সম্প্রতি ইকুয়েডর থেকে গাম্বিয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি দেশে বিআরআই প্রকল্পের ত্রুটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ইকুয়েডরের ২ দশমিক ৭ বিলিয়ন (২৭০ কোটি) ডলারের একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প প্রধানতম। সেটিতে এত বেশি ত্রুটি পাওয়া গেছে যে পুরো প্রকল্পটি বাতিল করতে হতে পারে। জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটি ইকুয়েডরের বিদ্যুতের অন্যতম বড় উৎস হওয়ায় প্রকল্পটি বাতিল হলে দেশটি বড় ঋণের মধ্যে ডুবে যেতে পারে।

২০১০ সালেও অন্যান্য দেশগুলোয় চীন যত ঋণ দিয়েছে, তার মধ্যে ঋণে জর্জর দেশগুলোকে দেয়া ধারের পরিমাণ ছিল ৫ শতাংশের কম, ২০২২ সালে তা বেড়ে ৬০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে গবেষণায় জানানো হয়েছে। এর মধ্যে আর্জেন্টিনা পেয়েছে সবচেয়ে বেশি ঋণ ১১ হাজার ১৮০ কোটি ডলার। এরপর পাকিস্তান পেয়েছে চার হাজার ৮৫০ কোটি ডলার। মিসর পেয়েছে এক হাজার ৫৬০ কোটি ডলার। ৯টি দেশ ১০০ কোটি ডলারের কম ঋণ নিয়েছে।

পিপলস ব্যাংক অব চায়না (পিবিওসি) সুরিনাম, শ্রীলঙ্কা ও মিসরের মতো অর্থনৈতিক সংকটে পড়া দেশগুলোকে উদ্ধারে ১৭ হাজার কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। লেনদেনে ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তায় ব্রিজ লোন দিয়েছে সাত হাজার কোটি ডলার। উভয় ঋণের মধ্যে ১৪ হাজার কোটি ডলার পরিশোধের মেয়াদ বাড়াতে হয়েছে, কিংবা পরিশোধের পর তা ফের ঋণ হিসেবে দিতে হয়েছে।

অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃত্রিমভাবে নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অঙ্ককে বড় দেখাতে পিবিওসি’র এ সহায়তাকে কাজে লাগিয়েছে বলেও গবেষণায় সমালোচনা করা হয়েছে।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য এইডডেটার পরিচালক ব্র্যাড পার্কস বলেন, বিপদে পড়া দেশগুলোকে উদ্ধারে চীনের এ ঋণ অস্বচ্ছ ও সমন্বয়হীন।

চীন এখন জাম্বিয়া, ঘানা ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোর সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠন নিয়ে আলোচনা করছে। এ প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখায় তাদের ব্যাপক সমালোচনাও চলছে। এর প্রতিক্রিয়ায় চীন বিপদে পড়া দেশগুলোর ঋণের পুরোটা বা আংশিক মওকুফে বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।