আতাউর রহমান: দেশের পুঁজিবাজারে জুন শেষে সমাপ্ত হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুম চলছে। এসময় কোম্পানিগুলো সমাপ্ত হিসাববছরে তাদের মুনাফার ওপর ভিত্তি করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এতে শেয়ারপ্রতি শেয়ারহোল্ডারদের যে আয় হয়, তাকে ডিভিডেন্ড গেইন বলা হয়ে থাকে। গত ৩০ জুন শেষে সমাপ্ত ২০২২-২৩ হিসাববছরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর যে আয় হয়েছে, সেখানে বেশিরভাগ খাতের কোম্পানির আয় পতনের সম্মুখীন হয়েছে। ফলে আলোচ্য সময়ে কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আয়ে প্রভাব পড়তে পারে এবং সমাপ্ত হিসাববছরে আয় কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া গত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুমে গড় লেনদেন অন্য সময়ের গড় লেনদেনকে ছাড়িয়ে গেছে। ফলে বাজারে বিনিয়োগ বাড়ায় বেশিরভাগ খাতের শেয়ারে ক্যাপিটাল গেইন ভালো হয়েছে। গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে বিমা খাতের শেয়ারে। আর কম আয় হয়েছে পাট খাতের শেয়ারে। সেই সঙ্গে পাঁচ বছরে সবচেয়ে কম লোকসান হয়েছে সিমেন্ট খাতে। আর সবচেয়ে বেশি লোকসান খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শেয়ারে।
গত পাঁচ বছরের লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুমের সময় (সেপ্টেম্বর) পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২২ পর্যন্ত সারাবছর পুঁজিবাজারে যে গড় লেনদেন হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসে তার থেকে বেশি গড় লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে বছরের তুলনায় সেপ্টেম্বরে দুই শতাংশ, ২০২০ সালে আড়াই শতাংশ, ২০২১ সালে সাড়ে সাত শতাংশ এবং ২০২২ সালে পাঁচ শতাংশের বেশি গড় লেনদেন বৃদ্ধি পায়। তবে ২০১৯ সালে লেনদেন কিছুটা কম হয় এবং ২০২২ সালে আগের বছরের থেকে লেনদেন কম হয়েছে। এদিকে গত পাঁচ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সেবা ও আবাসন খাতের শেয়ারে ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ আয় বা রিটার্নসহ সর্বোচ্চ বিনিয়োগ হয়েছে। এর পরে সিরামিক খাত ৩ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং কাগজ ও মুদ্রণ খাতে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ আয় হয়েছে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সিরামিক দ্বিতীয় এবং কাগজ ও মুদ্রণ খাত তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এছাড়া ব্যাংক খাতে শেয়ারে আলোচ্য বছরগুলোয় সবচেয়ে কম আয় ও বিনিয়োগ হয়েছে।
অপরদিকে সমাপ্ত অর্থবছরের গত ৯ মাসে তালিকাকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর যে আয় হয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উত্থান হয়েছে কাগজ ও মুদ্রণ খাতের কোম্পানির। এরপর রয়েছে ভ্রমণ ও অবকাশ খাত এবং তৃতীয় স্থানে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি। এদিকে গত ৯ মাসের আয়ে সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে প্রকৌশল খাতের কোম্পানিগুলোর। এরপর ছিল বস্ত্র খাত এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ট্যানারি খাতের কোম্পানি। এছাড়া পুঁজিবাজারের মোট ১৫টি খাতের মধ্যে আটটি খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির আয়ে পতন হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ খাতের কোম্পানি ২০২৩ অর্থবছরের গত ৯ মাসের আয়ে উল্লেখযোগ্য পতনের সম্মুখীন হয়েছে। এর জন্য প্রাথমিকভাবে প্রতিকূল অর্থনৈতিক অবস্থাকে দায়ী করা হয়েছে। তাই আলোচ্য খাতের দুর্বল কর্মক্ষমতার কোম্পানির প্রত্যাশিত লভ্যাংশের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এদিকে গত পাঁচ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে খাতভিত্তিক শেয়ারে রিটার্ন বা আয়ে দেখা গেছে, আলোচ্য সময়ে সবচেয়ে বেশি আয় ছিল বিমা খাতের শেয়ারে। এসময় খাতটির শেয়ারে সর্বোচ্চ ১২ শতাংশের বেশি আয় হয়েছে। এরপর সিরামিক খাতের শেয়ারে আট শতাংশ পর্যন্ত এবং মিউচুয়াল ফান্ড খাতের শেয়ারে সাত শতাংশ পর্যন্ত আয় হয়েছে। এসময় পাট খাতের শেয়ারে সবচেয়ে কম আয় হয়েছে, যা দুই শতাংশের মধ্যে ছিল। অপরদিকে গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শেয়ারে। এ খাতে তিন শতাংশ পর্যন্ত লোকসান হয়েছে। আর সবচেয়ে কম লোকসান হয়েছে সিমেন্ট খাতের শেয়ারে। খাতটিতে এক শতাংশ পর্যন্ত লোকসান হয়েছে। উল্লেখযোগ্য ২১টি খাতের মধ্যে ১৪টি খাতে ইতিবাচক আয় হয়েছে এবং ছয়টি খাতে লোকসান হয়েছে। আর করপোরেট বন্ড খাতে আয় ও লোকসান কিছুই হয়নি।
অপরদিকে গত বছর ডিভিডেন্ড আয়ের দিক থেকে ব্যাংক এবং টেলিকমিউনিকেশন খাত সবার শীর্ষে রয়েছে। খাত দুটিতে চার শতাংশ পর্যন্ত আয় হয়েছে। আর সবচেয়ে কম আয় হয়েছে পাট খাতে। খাতটিতে এক শতাংশেরও কম আয় হয়েছিল। বিনিয়োগকারীরা ২০২৩ সালের লভ্যাংশের আয় ২০২২ সালের মতোই হবে বলে আশা করতে পারে বলে জানা গেছে। গত ৯ মাসে কোম্পানিগুলোর মধ্যে নেতিবাচক আয়ের ব্যাপকতার কারণে এই প্রত্যাশা বাস্তবায়িত নাও হতে পারে, ফলে লভ্যাংশ বিতরণে অনিশ্চয়তার শঙ্কা করা যাচ্ছে।