শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পর্যায়ক্রমে প্রত্যেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। আগে আট ভাগ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী আবাসন সুবিধা পেত। এখন ৪০ ভাগ পাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি, তাতে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীসহ বস্তিবাসীও ফ্ল্যাটে বসবাস করার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহছাড়া থাকবে না। প্রতিটি মানুষ ঘর পাবে, জমি পাবে। গতকাল সোমবার গণপূর্ত অধিদফতরের চারটি এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তিনটিসহ মোট সাতটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। খবর: বাসস।
রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। স্বাগত বক্তব্য দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদুল্লাহ খন্দকার। সুইচ টিপে ফলক উম্মোচনের মাধ্যমে সাতটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারপ্রধান বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি আমরা বেসরকারি মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্প করেছি। উত্তরা, ভাষানটেক, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে এসব ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জড়িত। তারা যেন মনোযোগ দিয়ে ভালোভাবে কাজ করতে পারে, আবাসন নিয়ে যাতে তাদের চিন্তা করতে না হয়, সে কারণে এ ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বলেন, বস্তিবাসী যে ভাড়া দিয়ে অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় জীবনযাপন করে, সে তুলনায় ভাড়া অনেক বেশি। আমরা তাদের জন্যও আবাসনের পরিকল্পনা নিয়েছি। তারা দিনের ভাড়া, সাপ্তাহিক ভাড়া, এমনকি মাসের ভাড়া পরিশোধ করে সেখানে উন্নত পরিবেশে বসবাস করতে পারবে।
বর্তমানে সরকারি ফ্ল্যাটে বসবাসকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের জন্য চমৎকার ফ্ল্যাট তৈরি করে দিচ্ছে সরকার। এ ফ্ল্যাটগুলো নিজের সম্পদ মনে করে ব্যবহার করবেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবেন। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস খরচের বেলায় সাবধানী হবেন। কোনোক্রমেই এসবের অপচয় করবেন না। আপনাদের যে দামে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস দেওয়া হয়, তার চেয়ে খরচ অনেক বেশি পড়ে, যে ব্যয়ভার সরকার বহন করে।
আর্কিটেক্ট ও প্রকৌশলীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখনও ঢাকা ও ঢাকার চারপাশে যেসব পুকুর, খাল, লেক, ঝিল ও জলাশয় আছে, সেগুলো ভরাট করে বিল্ডিং করতে চাইলে সে কাজ করবেন না। যেকোনো স্থাপনা নির্মাণ করবেন পরিবেশ-প্রতিবেশ ঠিক রেখে। এটা আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ। আশা করি, এ অনুরোধটা রাখবেন। তিনি বলেন, একটি মাস্টার প্ল্যান প্রস্তুত করার পর আমাদের জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে সুপরিকল্পিতভাবে উন্নতি ঘটাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শহরের পাশাপাশি গ্রামের মানুষের জন্য আধুনিক আবাসনের সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা হবে। জেলা-উপজেলায় পরিকল্পিত আবাসন না করা গেলে একসময় কৃষিজমি শেষ হয়ে যাবে। তিনি জেলা-উপজেলায় আবাসন গড়ে তোলার জন্য মাস্টারপ্ল্যান করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষকে একটি মানসম্মত জীবনযাত্রা উপহার দেওয়ার জন্য আমরা স্কুল, কলেজ, রাস্তাঘাট, আবাসন, কলকারখানা যা-ই নির্মাণ করি না কেন, তা সুপরিকল্পিত উপায়ে সম্পন্ন করতে চাই। আমরা এলোমেলোভাবে কোনো নির্মাণকাজের অনুমতি দিতে চাই না।
তিনি বলেন, যে কোনো পরিকল্পনা করার সময় আপনাদের জলাশয়গুলোর কথা মাথায় রাখতে হবে। কারণ এগুলো পানির আধার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এগুলো পানি ধরে রাখে, যা জলাবদ্ধতা হ্রাসে সহায়তা করে। প্রয়োজনে সড়কগুলো যেন বাড়ানো যায়, তা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা করার জন্য শেখ হাসিনা স্থপতিদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের মন-মানসিকতার জন্যই এখন আর ঢাকা শহরে খাল ও পুকুর দেখা যায় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এরই মধ্যে জলাশয়গুলো রক্ষায় পরিকল্পনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছি।
বিগত ১০ বছরে সরকারের ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ২০২১ সাল নাগাদ একটি উন্নয়নশীল ও ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে তার সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এরই মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছি এবং এখন আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের আগেই এ দেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
পরে প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন রোডের গ্রেড-ওয়ান সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নির্মিত তিনটি ভবনের মধ্যে আবাসন প্রকল্প ঘুরে দেখেন। অনুষ্ঠানে সাতটি প্রকল্পের একটি প্রামাণ্য ভিডিও চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী সাতটি প্রকল্প উদ্বোধন করে বলেন, আমরা মন্ত্রিসভার সদস্য, সচিব ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত এক হাজার ৬৭১টি ফ্ল্যাটের উদ্বোধন করেছি। তিনি বলেন, আমি মনে করি সুন্দর পরিবেশে প্রকল্প এলাকায় আবাসিক সুবিধা পেয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের দায়িত্ব পালনে আরও মনোযোগী হবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৬টি প্রকল্পের অধীন ছয় হাজার ৩৫০টি ফ্ল্যাট তৈরি করেছি এবং ১৩টি প্রকল্পের অধীন আরও এক হাজার ৬৭৪টি ফ্ল্যাট তৈরির জন্য বরাদ্দ দিয়েছি। পাশাপাশি গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুর এলাকায় ২০টি পরিত্যক্ত বাড়িতে ৩৯৮টি ফ্ল্যাট এবং চট্টগ্রামে পরিত্যক্ত বাড়িতে এক হাজার ৮২৪টি ফ্ল্যাট ও ৬৪টি জেলায় ৬৪টি ডরমেটরি নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আরও ১৫টি পরিত্যক্ত বাড়িতে ৩১৭টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি এবং সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আমরা এরই মধ্যে এক হাজার ৫১২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করেছি। তিনি বলেন, তার সরকার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক সুবিধা বৃদ্ধি করতে ৬৪টি জেলায় দুই হাজার ৮১৬টি আবাসন ভবন নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সবার জন্য আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তার সরকারের কাজ করে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা স্বল্প ও মধ্যআয়ের লোকদের মাঝে বিক্রয় করার জন্য এরই মধ্যে ৩৩ হাজার ৫২৬টি প্লট ও আট হাজার ৯২২টি ফ্ল্যাট তৈরি করেছি। এর মধ্যে উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের তৃতীয় ধাপের অধীন ছয় হাজার ৬৩৬টি ফ্ল্যাট বিতরণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক হাজার ৮০৫টি ফ্ল্যাটের উন্নয়ন এবং আট হাজার ৩৯টি ফ্ল্যাটের নির্মাণকাজ চলছে। তিনি আরও জানান, আমরা সারা দেশে আরও ১৮ হাজার ১৪৮ প্লট উন্নয়ন এবং এক লাখ ৪১ হাজার ও ৬৮৭ ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, ফ্ল্যাট নির্মাণকাজ শেষ হলে নগরবাসীর আবাসন সংকট অনেকটা কমে যাবে।
