বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পণ্য রপ্তানিতে পাট খাত পুনরুজ্জীবিত: পাটমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেছেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রামের কেএফডি জুট মিলস্ লিমিডেটের উৎপাদিত পাটপণ্য বিদেশে রপ্তানি শুরুর মাধ্যমে পাট খাত আবার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) মিলসমূহে ভাড়াভিত্তিক বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় এসব মিলে নতুন করে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কেএফডি জুট মিলের ইজারাদার ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ এ পর্যন্ত ১৩০ টন পাটজাত পণ্য ভিয়েতনাম, তিউনিশিয়া ও চীনে রপ্তানি করেছে। এছাড়া প্রায় ৬০০ টন পাটপণ্যের অর্ডার শিপমেন্টের অপেক্ষায় আছে। গতকাল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় কেএফডি জুট মিলস্ লিমিটেডের উৎপাদন কার্যক্রম পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের কেএফডি জুট মিলস লিমিটেডকে ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছে ভাড়াভিত্তিক ইজারা দেয়া হয়। কেএফডি জুট মিলটি বর্তমানে ৪০০ শ্রমিকের মাধ্যমে দৈনিক গড়ে ১০ টন পাটপণ্য উৎপাদন করছে। ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ এ পর্যন্ত ১৩০ টন পাটজাত পণ্য ভিয়েতনাম, তিউনিশিয়া ও চীনে রপ্তানি করছে। এছাড়াও প্রায় ৬০০ টন পাটপণ্যের অর্ডার শিপমেন্টের অপেক্ষায়। ইউনিটেক্স জুট ইন্ডাস্ট্রিজ আরও দুটি উৎপাদন ইউনিট আধুনিকায়নের মাধ্যমে চালু করতে যাচ্ছে। ফলে প্রচলিত ও বহুমুখী পাটপণ্য মিলে দৈনিক গড়ে ১০০ টন পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে। আশা করছি, এখানে ৩৫০০ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

তিনি বলেন, ‘নরসিংদীর বাংলাদেশ জুট মিলস্ লিমিটেড ভাড়াভিত্তিক ইজারা দেয়া হয়েছে। মিলটিতে এরই মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এছাড়া খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলস্ ও চট্টগ্রামের হাফিজ জুট মিলের লিজ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’ এছাড়া ১৩টি জুটমিলের জন্য দ্বিতীয় ইওআই (এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট) বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ১৮টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৫৩টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। প্রস্তাবগুলো দ্রুত যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। আশা করছি, এই পর্যায়ে আরও কয়েকটি মিল ভাড়াভিত্তিক লিজ দেয়া সম্ভব হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, ‘নতুন করে এসব মিলে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে এবং এ ক্ষেত্রে অবসানকৃত শ্রমিকরা অগ্রাধিকার পাবেন।’

পরে মিল প্রাঙ্গণে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মন্ত্রী। এসময় তিনি বলেন, ইজারা দেয়া সরকারি পাটকল কেমন চলছে, দেখতে এসেছি; বেসরকারি উদ্যোক্তারা পাটের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম এগিয়ে নিতে পারবে কি না। এখানে বেশ কর্মচাঞ্চল্য দেখছি। শ্রমিকদের কানে কানে জানতে চেয়েছি, তারা কেমন আছে। মালিক-শ্রমিক মিলে মিল চালালে মালিকবান্ধব শ্রমিক ও শ্রমিকবান্ধব মালিক হলে মিল ভালো চলে।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান আমলে পাট ছিল প্রধান আয়ের উৎস, পাটের সুদিন ফিরছে, পাটের সুতা তৈরি হচ্ছে। পাট রপ্তানির সব আয় ডলারে হবে, শতভাগ ভ্যালু অ্যাডিশন হবে। কৃষক যখন পাট রোপণ করছে, সেটি একেকটি ডলার। পাটখড়ির চারকোল রপ্তানি করছি। পাট ও পাটখড়ি দুটিই রপ্তানি হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। বস্ত্র ও পাট সচিব মো. আব্দুর রউফ, ইউনিটেক্স গ্রুপের সিএফও মো. আরিফ, বিজনেস কো-অর্ডিনেটর সাকিব আহমেদ সিদ্দিকী, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শামসুল আলম তালুকদার প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।