নিজস্ব প্রতিবেদক: সংকট থাকায় খুচরা বাজারে হু হু করে বেড়েই যাচ্ছে পেঁয়াজের দাম। বর্তমানে এ দাম গিয়ে ঠেকেছে ৮০ টাকায়, যা মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। একই সঙ্গে টিসিবি খুচরা ৪৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে। এতে করে কয়েকদিনের মধ্যেই ১০ টাকা কমে ৭০ টাকা কেজিতে চলে এসেছিল পেঁয়াজ। কিন্তু সপ্তাহের ব্যবধানে ফের ১০ টাকা করে বেড়ে গেছে নিত্যপণ্যটির দাম। আবার বিক্রি হতে দেখা গেছে ৮০ টাকা কেজিদরে।
পেঁয়াজের পাশাপাশি বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে এবং ডিমের দাম বেড়েছে ডজনে ১০ টাকা। গতকাল রাজধানীর বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়লেও লাল কক ও পাকিস্তানি লেয়ার মুরগি আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। লাল কক মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে
২১০-২১৫ টাকা এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকা।
ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গরমের কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম অনেকদিন কম ছিল। এখন একটু গরম কমায় দাম বাড়তে শুরু করেছে। তাদের ধারণা, সামনে ব্রয়লার মুরগির দাম আরও একটু বাড়বে। ব্রয়লার মুরগির দামের পাশাপাশি বেড়েছে ডিমের দাম। বাজারভেদে ফার্মের ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০-১০৫ টাকা। আর মুদি দোকানে এক পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা এবং পিসে এক টাকা বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অনেকদিন ধরেই ডিমের ডজন ৯৫-১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এখন ডিমের দাম বেড়ে গেছে। তাই ১১০ টাকার নিচে ডজন বিক্রি করার উপায় নেই। ডিমের দাম সহসা কমবে বলে মনে হয় না। কারণ প্রতি বছর এ সময় ডিমের দাম বাড়ে।
এদিকে শীতের আগাম সবজি শিমের কেজি গত সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। ছোট আকারের ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা পিস, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০-৫০ টাকা। ফুলকপির মতো কিছুটা দাম কমেছে পাতাকপি ও মুলার। গত সপ্তাহে ৪০-৫০ টাকা পিস বিক্রি হওয়া পাতাকপির দাম কমে ৩০-৪০ টাকায় নেমে এসেছে। আর মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০-৬০ টাকা কেজি। শীতের আগাম সবজির সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে লাউ, টমেটো, করলা, গাজর, ঝিঙে, বরবটি, বেগুন, পটোল, ঢেঁড়স, উসি, ধুন্দলসহ সব ধরনের সবজি। ছোট আকারের লাউ আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা পিস। পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা কেজি। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি। করলা ৬০-৭০ টাকা, বরবটি ৭০-৮০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা, চিচিঙা, ঝিঙা, ধুন্দল ৫০-৬০ টাকা, পটোল ৪০-৫০ টাকা ও কাঁকরোল ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকা কেজি এবং মিষ্টিকুমড?ার ফালি পাওয়া যাচ্ছে ১৫-২০ টাকার মধ্যে।
অন্যদিকে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ার অজুহাতে গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম এক লাফে প্রায় দ্বিগুণ হয়। ৫০-৫৫ টাকা কেজিদরে বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম এক লাফে ৭৫-৮০ টাকা হয়ে যায়। পেঁয়াজের এমন দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।
খোলাবাজারে বিক্রির পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে করণীয় ঠিক করতে সরকারি বিভিন্ন দফতর, পেঁয়াজের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকের পর নতুন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন এবং বাংলাদেশ ট?্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল বিরুনি ঘোষণা দেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। সরকারের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসার পর ২৪ ঘণ্টার বদলে ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও পেঁয়াজের দাম কমেনি। গত কয়েকদিনের মতো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকা কেজি। আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি। পেঁয়াজের দামের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কথায় চিড়া ভেজে না। পেঁয়াজের দাম কমাতে হলে বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ তো বাস্তবে দেখছে না। টিসিবি যে পেঁয়াজ বিক্রি করছে, সেখান থেকে কজন কেনার সুযোগ পাচ্ছে? ঢাকায় যে মানুষ তার এক শতাংশও টিসিবির পেঁয়াজ পাচ্ছে না। তাহলে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রির প্রভাব কীভাবে বাজারে পড়বে?
অন্যদিকে, পূজা উপলক্ষে ভারতে ৫০০ টন ইলিশ রফতানির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এরপরও ইলিশের বাজারে কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং দাম কমেছে কিছুটা। এসব বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায় মিলছে। এছাড়া বিভিন্ন আকারভেদে জাটকা বিক্রি করতে দেখা গেছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে। কিছুটা দাম কমে এসব বাজারে প্রতি কেজি রুই (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়, মৃগেল ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায়, পাঙাশ ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়, চিংড়ি হরিণা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, বাগদা ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকায়, গলদা ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায়, শিং ৩০০ থেকে ৮০০ টাকায় ও বাইম ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায়।