মো. আসাদুজ্জামান নূর: বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে মিশ্র প্রবণতা দেখা যায়। বিভিন্ন খবরের ভিত্তিতে উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে সপ্তাহজুড়ে লেনদেন সম্পন্ন হয়। তবে সপ্তাহ শেষে মূল্য সূচকের কিছুটা উত্থান হয়েছে। আগের সপ্তাহের তুলনায় টাকার অঙ্কে ডিএসইর লেনদেন বেড়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এছাড়া ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ডিএসইর বাজার মূলধনেও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ-সংক্রান্ত এক্সপোজার লিমিট গণনা পদ্ধতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিপরীতমুখী বক্তব্য বিভ্রান্ত করে বিনিয়োগকারীদের। এরপরে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসিকে নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষেও এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসায় পুঁজিবাজারে আরও আস্থাহীনতা তৈরি হয়। যার কারণে কখনও ঊর্ধ্বমুখী আবার কখনও নি¤œমুখী প্রবণতার মধ্য দিয়ে লেনদেন হতে থাকে।
যদিও এরপরই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই পক্ষকে নিয়ে বসবেন। এমন একটি খবর প্রকাশ হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। তবে এই বৈঠকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি কোনো পক্ষ থেকে। বৈঠক ডাকার এ বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের মনে যে চিড় ধরা আত্মবিশ্বাস কিছুটা হলেও ফিরিয়ে দিতে পেরেছে, সেটি সপ্তাহের শেষ দিনের লেনদেনেই স্পষ্ট হয়। ফলে সপ্তাহজুড়ে কখনও উত্থানে আবার কখনও পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন হতে দেখা গেছে।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে ৩৮৪টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনাবেচা হয়। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২৭৮টির, কমেছে ৭৯টির। আর ২৩টির দাম ছিল অপরিবর্তিত। আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে পাঁচ হাজার ৩০৯ কোটি ১ লাখ ৪৬ হাজার টাকার শেয়ার। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল পাঁচ হাজার ৩৯৯ কোটি ৭৭ লাখ ৬ হাজার টাকার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ২৬৯ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার টাকার বা ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ লেনদেন বেড়েছে। যেটি খুব বেশি নয় বলে মনে করেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। লেনদেন খুব বেশি না বাড়ার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, কিছু প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগ বাড়লেও বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ। ফলে তারা এখনও পুরোদমে বিনিয়োগ থেকে বিরত রয়েছেন। যতটুকু বিনিয়োগ করছেন সেটিও মৌলভিত্তির কোম্পানিতে। ফলে তুলনামূলকভাবে বিনিয়োগ তেমন বাড়েনি।
সাপ্তাহিক লেনদেন দেখা গেছে, বিনিয়োগকারীরা বেশিরভাগ মৌলভিত্তির কোম্পানিতে বিনিয়োগে আগ্রহী ছিলেন। সপ্তাহের মোট লেনদেনে শীর্ষ দশ কোম্পানির অবদান দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ৭১ শতাংশ। শীর্ষ দশের আটটিই মৌলভিত্তির কোম্পানি।
খাতভিত্তিক লেনদেনের চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর খাতভিত্তিক লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে ব্যাংক খাত। মোট লেনদেনের ১৮ শতাংশই এই খাতের। এছাড়া ফার্মাসিউটিক্যালস খাত ১২ দশমিক ৫ শতাংশ লেনদেন করে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে ছিল। বিবিধ খাত ১১ দশমিক ৬ শতাংশ লেনদেন করে তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তালিকায় থাকা অন্য খাতগুলোর মধ্যে বস্ত্র খাত ১০ দশমিক ৮ শতাংশ, আর্থিক খাত ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, প্রকৌশল খাত ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, সাধারণ বিমা খাত ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, জ্বালানি-বিদ্যুৎ খাত ৫ দশমিক ৪ শতাংশ অবদান রাখে। বাকি খাতগুলোর অবদান পাঁচ শতাংশের নিচে ছিল।
লেনদেনের ভিত্তিতে ডিএসইতে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স সপ্তাহের ব্যবধানে ৪৮ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে ৬ হাজার ৯৮৪ পয়েন্টে অবস্থান করে। অন্যদিকে কমেছে ডিএস৩০ সূচক। আলোচিত সপ্তাহে বাজার মূলধনের শীর্ষ ৩০ কোম্পানির মূল্যসূচক ডিএস৩০ আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট বা দশমিক ১৪ শতাংশ কমে ২ হাজার ৬৩২ পয়েন্টে অবস্থান করে। অন্যদিকে ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ১৬ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বা এক দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে ডিএসইতে বাজার মূলধনেও ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে ৪ হাজার ৩৪৯ কোটি ৮৫ লাখ ২৪ হাজার ৬৯৯ টাকা বা দশমিক ৭৯ শতাংশ বাজার মূলধন বেড়েছে। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইতে বাজার মূলধন ছিল ৫ লাখ ৫২ হাজার ৮৪০ কোটি ৬২ লাখ ৬৯ হাজার টাকায়। আর সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস লেনদেন শেষে বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ৫৭ হাজার ১৯০ কোটি ৪৭ লাখ ৯৪ হাজার টাকায়।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর সাপ্তাহিক রিটার্নে দর বেড়েছে ১৬ খাতে। অন্যদিকে দর কমেছে মাত্র ৪ খাতে। আলোচ্য সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে পাট খাতে। এই খাতে ১১ দশমিক ১ শতাংশ দর বেড়েছে। আর বস্ত্র খাতে ৬ শতাংশ দর বেড়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তালিকার তৃতীয় স্থানে থাকা আইটি খাতে দর বেড়েছে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ।
এছাড়া খাদ্য খাতে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, কাগজ খাতে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, সাধারণ বিমা খাতে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ, সিরামিক খাতে ৩ দশমিক ১ শতাংশ ও প্রকৌশল খাতে ৩ শতাংশ দর বাড়তে দেখা গেছে। অন্যদিকে দর কমেছে টেলকমিউনিকেশন, বিবিধ, ব্যাংক ও জীবন বিমা খাতে।
একক কোম্পানি হিসেবে সাপ্তাহিক দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি, ফাইন ফুডস, এগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি, জেমিনি ইত্যাদি। অন্যদিকে সবচেয়ে বেশি দর হারাতে দেখা যায়, এক্মি পেস্টিসাইডস, ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স মিউচুয়াল, আমান ফিড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ইত্যাদি।