Print Date & Time : 13 September 2025 Saturday 2:43 am

বৈদেশিক ঋণের অর্থ ছাড় বাড়াতে উদ্যোগ নিন

কয়েক মাস ধরে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, সেই অনুপাতে রপ্তানি বৃদ্ধি না হওয়া, প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) কমে যাওয়া এবং ডলারের তুলনায় টাকার অবমূল্যায়নে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে। জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় আরও বাড়লে রিজার্ভে টান বাড়তেই থাকবে। সাধারণভাবে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকার কথা বলা হলেও, রিজার্ভ কমে যাওয়া অর্থনৈতিক শক্তি কমে যাওয়াকে ইঙ্গিত করে। আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রপ্তানি আয় কমতে থাকলে রিজার্ভও কমতে থাকবে। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স কমতে থাকলেও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে হবে।

জরুরি ভিত্তিতে রিজার্ভ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। আমদানি বিশেষ করে বিলাস পণ্যের আমদানি যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। অবশ্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এলসি মার্জিন বাড়িয়েছে। কিন্তু কার্যকর হচ্ছে কিনা, সেটা দেখতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে হবে। আর রেমিট্যান্স বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আনলে তা প্রাপকের হাতে পৌঁছাতে দেরি হয়। কেবল প্রণোদনা দিয়ে সুফল মিলবে না, তাই সময় কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। সব রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।

বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অগ্রগতি না হলে প্রধান বিকল্প আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়ার আলোচনা শুরু করেছে। যদিও এ উদ্যোগ আরও আগে নেয়া দরকার ছিল।

গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি বাড়লেও অর্থছাড় কমেছে। মঙ্গলবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ওয়েবসাইটে বিদেশি সহায়তার সর্বশেষ উপাত্ত সন্নিবেশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ইআরডি বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে ৪০ কোটি ৫৪ লাখ ডলারের সমান। এটি পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। তবে বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি আগের অর্থবছরের চেয়ে বাড়লেও চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থছাড়করণে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এ পিছিয়ে থাকার পেছনে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় অর্থছাড়ে গতি আনতে হবে। আমদানি খরচ কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আমদানি খরচ হয় শিল্পের কাঁচামালে। এতে প্রতীয়মান হয় আমাদের শিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত বিষয় হলো, আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়া মানে আমদানি বেড়ে যাওয়া নয়। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম এবং জাহাজের ভাড়া উভয়ই বেড়েছে। তাতে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। তবে যথাযথ পণ্য আমদানি হচ্ছে, এর নিশ্চয়তা বিধানও জরুরি। এতে আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার কমে আসবে। আমদানি খরচও কমবে। এর পাশাপাশি বড় ধরনের বৈদেশিক বিনিয়োগ আনারও উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বিজার্ভ বাড়াতে সম্ভাব্য সব প্রয়াসই চালিয়ে যেতে হবে।