শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চোরাইপথে আসা স্বর্ণ ধরা পড়ার খবর ছিল সাধারণ ঘটনা। অনেকে তখন বিমানবন্দরটিকে ‘স্বর্ণের খনি’ বলে ব্যঙ্গ করত। পরে দেখা গেছে, শাহ আমানতও এ ক্ষেত্রে তেমন পিছিয়ে নেই। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে গত মাসে (নভেম্বরে) যাত্রীরা বৈধভাবে এক টন স্বর্ণ এনেছেন। গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের মার্চ কালপর্বে বৈধপথে ১০৪ কেজি স্বর্ণ এসেছে।
মহামারি কভিডের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিয়েশাদিসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান কমে যায়। এতে স্বর্ণের চাহিদা কমতে থাকে। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও চাহিদা তেমন বাড়েনি। চাহিদা কমে যাওয়ার পরও বিদেশ থেকে স্বর্ণ আমদানি হঠাৎ বেড়েছে।
বৈধপথে স্বর্ণ আমদানি বাড়লে দেশের রাজস্ব আয় বেশি হয়। এটি নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। কিন্তু সব স্বর্ণ বৈধভাবে আসছে, বা কাস্টমসকে ফাঁকি দিয়ে আসছে কি না, আমাদের জানা নেই। কভিডকালে উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় বৈধ-অবৈধ কোনোভাবেই স্বর্ণ আমদানি হতে পারেনি। অবশ্য উড়োজাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চোরাচালান বাড়তে পারে বলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ধারণা। এক মাসে যে স্বর্ণ আমদানি হয়েছে, তা গত অর্থবছরেও হয়নি। তাই স্বর্ণ আমদানি বেড়ে যাওয়া বিষয়টিও ভালোভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে আমদানির বিধান রেখে ‘স্বর্ণ নীতিমালা, ২০১৮’ পাস হয়। তখন আশা করা হয়েছিল অবৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি কিংবা চোরাইপথে স্বর্ণ আসা কমবে। অলঙ্কার প্রস্তুত করে রপ্তানির সুযোগও রাখা হয়েছে। নীতিমালা প্রণয়নের আগে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতিসহ (বাজুস) অংশীজনদের মত নেওয়া হয়। এ অবস্থায় আশা করা যায়, কোনোভাবেই চোরাচালানে জড়িত হবেন না ব্যবসায়ীরা। তারা অবৈধভাবে আসা পণ্য বর্জন করলে চোরাচালানিরাও নিরুৎসাহিত হবেন।
আগে বিমান ও বিমানবন্দরকর্মীদের সহায়তায় এসব বন্দর ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে অবৈধভাবে স্বর্ণ আনা হতো। আবার যেসব বিমানে স্বর্ণের চালান ধরা পড়ত, সেসব বিমান মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে দুবাই থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকা আসত। ২০১৩ সালে ভারত স্বর্ণ আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেয়ায় ভারতে স্বর্ণ চোরাচালানের ট্রানজিট রুট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করা শুরু হয়। এরপর বাংলাদেশও চোরাচালান ঠেকাতে স্বর্ণ আমদানির ওপর ২০ গুণ শুল্ক বাড়িয়েছে। কিন্তু তাতে কোনো ফল হয়নি। সম্প্রতি আটক এক ব্যক্তির নামের সঙ্গে ‘গোল্ডেন’ শব্দ যুক্ত হওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে এসেছে। কম বেতনের এই দোকান কর্মচারী হাজার কোটি টাকার মালিক। আগেও চুনোপুঁটি পর্যায়ের বাহকরা ধরা পড়েছে, রাঘববোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে। বিমানকর্মী, সিভিল এভিয়েশনের কর্মী, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা জড়িত না থাকলে অনুমোদিত পন্থায় স্বর্ণ আনা-নেয়া কিংবা আমাদের বিমানবন্দরগুলো চোরাচালানিদের নিরাপদ রুট হওয়া সম্ভব নয়।