বৈশাখী উৎসব বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির গৌরবময় উত্তরাধিকার: শিল্পমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, বৈশাখী উৎসব বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির গৌরবময় উত্তরাধিকার। এ উৎসবকে ঘিরে জাতি-ধর্ম-বর্ণ কিংবা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব মানুষের মধ্যে এক ধরনের সম্মিলন ও ঐক্য গড়ে ওঠে।’

মন্ত্রী গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘বৈশাখী মেলা, ১৪২৯’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) এবং বাংলা একাডেমি ১৫ দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করেছে।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদার সভাপতিত্বে এ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিকের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মাহবুবর রহমান।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘বৈশাখী মেলা আবহমান বাংলার চিরায়ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। হাজার বছর ধরে গ্রামগঞ্জে এ মেলার আয়োজন হলেও ইদানীং শহর-নগরেও এ মেলা অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। বাংলা একাডেমি চত্বরে আয়োজিত এই বৈশাখী মেলা এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি নগরবাসীকে ক্ষণিকের জন্য হলেও অনাবিল আনন্দ উপভোগের সুযোগ করে দিচ্ছে।’

নূরুল মজিদ হুমায়ূন বলেন, ‘দেশের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প পণ্যের বিপণন ও প্রদর্শনের সঙ্গে রয়েছে এ ধরনের মেলার নিবিড় সম্পর্ক। বিসিকের শিল্পপণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ের স্থান হিসেবে মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করে। শুধু উৎপাদিত পণ্যের কেনাবেচাই হয় না, নতুন নতুন নকশা, নমুনা, উৎস, দর প্রভৃতির সঙ্গে ক্রেতা-বিক্রেতা ও উৎপাদকের পরিচয় ঘটে। তাই পণ্যের বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের অন্যতম মাধ্যম হলো মেলা।’

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালির সবচেয়ে বড় সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব। পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনকে ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে সে সময় পূর্ব বাংলার মানুষ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নববর্ষ উদ্যাপনে এক কাতারে শামিল হয়।’

কে এম খালিদ বলেন, ‘বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে আয়োজিত পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা নতুন মাত্রা যোগ করে।’

তিনি বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানাদি প্রতীকী অর্থ হয়ে পড়ে সন্ত্রাস, মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা এবং সব অপশক্তির বিরুদ্ধে এক জোরালো সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ। বর্তমান সংস্কৃতিবান্ধব সরকারের দৃঢ় প্রচেষ্টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর নির্বাচিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে বিশ্বস্বীকৃতি লাভ করেছে।’

গতকাল শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৫ দিনব্যাপী এ মেলার ১০০টি স্টলে বিসিক থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্যোক্তাদের তৈরি হস্ত ও কুটিরশিল্পজাত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী স্থান পেয়েছে। মেলা থেকে ক্রেতারা কারুপণ্য, নকশিকাঁথা, পাটপণ্য, বুটিকস পণ্য, জুয়েলারি, লেদার গুডস, অরগানিক ফুডস, ইলেকট্রনিকস পণ্য, মধুসহ নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্য কিনতে পারবেন।

প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মেলা সবার জন্য উম্মুক্ত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।