নিজস্ব প্রতিবেদক: গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বলেছেন, আবাসন খাতের উন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। করোনা মহামারি ও মিয়ানমারের আরাকানে সেনাবাহিনীর নির্যাতনে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হওয়ায় দেশের আবাসন খাত নতুন চ্যালেঞ্জে পড়েছে। সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বিশ্ব বসতি দিবস-২০১২’ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা এবং তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। ফলে বহু মানুষ প্রতি বছর আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। যা ভবিষ্যতে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে আরও বহু মানুষ আশ্রয়হীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতা, পুঁজিবাদী সভ্যতা এবং সম্পদের অসম বণ্টন সমাজে প্রতিনিয়ত বৈষম্য বাড়াচ্ছে। এতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অপুষ্টি এবং বাসস্থান সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক আরাকানে গণহত্যার মতো ঘটনা বিশ্বে নতুন করে উদ্বাস্তু সমস্যা সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ চ্যানেল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। ২০২০ সাল থেকে করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ফলে আবাসন ব্যবস্থায় নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কারও একার পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য চাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা।
সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও দেশের আবাসন খাতে সাফল্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে লক্ষ্মীপুরের রামগাতি উপজেলায় আশ্রয়হীন ও ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন শুরু করেন। রাজধানী ঢাকার বাউনিয়াবাদে তিনি বাস্তুহারাদের বাসস্থানের জন্য ভূমি বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা নিহতের পর এই কর্মসূচি স্থবির হয়ে পড়ে। অবশেষে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পান। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি সবার জন্য মানসম্মত আবাসন নিশ্চিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন।
বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রাণালয় স্বল্প, মাধ্যম ও নি¤œআয়ের মানুষের জন্য বিপুল প্লট উন্নয়ন ও ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। রাজধানীতে বস্তিবাসীদের জন্য ৫০০টি ভাড়াভিত্তিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। ফেনীর দত্তপাড়া এবং ঢাকার মিরপুরে এ ধরনের আরও বড় দুটি প্রকল্প গ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে। কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল রেসিডেন্সিয়াল পার্কে পিপিপির ভিত্তিতে নির্মাণ করা হবে ১৩ হাজার ৭২০টি ফ্ল্যাট। সরকারি কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য ঢাকার মতিঝিল, আজিমপুর, মালিবাগ, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসন ২০০৮ সালে বিদ্যমান ৮% থেকে এ পর্যন্ত ২৬% এ উন্নীত করা হয়েছে। দেশের প্রত্যেকটি শহরের পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন কৃষি জমি রক্ষা পাবে, অন্যদিকে সবার মানসম্মত আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী সবার মানসম্মত আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং এ ব্যাপারে সর্বস্তরে প্রয়োজনীয় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৮৬ সাল থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার জাতিসংঘভুক্ত সব দেশ বিশ্ব বসতি দিবস পালন করে আসছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘বৈষম্য হ্রাসের অঙ্গীকার করি, সবার জন্য টেকসই নগর গড়ি’।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে মন্ত্রণালয় ও এর অধীন বিভিন্ন দপ্তর সংস্থার প্রধানরা বক্তব্য দেন।