বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ছয় টাকা বাড়ল

আয়নাল হোসেন: রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম আবারও বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে লিটারপ্রতি বেড়েছে সর্বোচ্চ ছয় টাকা।

রাজধানীর পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের খুচরা ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহ আগে তাদের বাজারে প্রতি ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের দাম ছিল ৫১০ থেকে ৫৫০ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৫৩০ থেকে ৫৮০ টাকা। অর্থাৎ চার থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।

এ বাজারের মেসার্স শুভ এন্টারপ্রাইজের মালিক সাইফুল ইসলাম জানান, বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েই চলেছে। কোম্পানিগুলো সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় এমনটা হয়েছে। শুধু বোতলজাত সয়াবিন তেলই নয়, খোলা সয়াবিন তেলের দামও বেড়েছে। আগে প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১০৫ টাকা। গতকাল তা ১০৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাম ও সুপার পাম তেলের দামও বেড়েছে বলে জানান তিনি।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের খুচরা ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তাদের বাজারে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মালিকানাধীন রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের প্রতি ৫ লিটার বোতলের গায়ে মূল্য আছে ৬২৫ টাকা। সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন তীর ব্র্যান্ডের ৫ লিটারের বোতলের গায়ে মূল্য রয়েছে ৫৮০ টাকা। পুষ্টি ও বসুন্ধরাসহ অন্যান্য তেলের বোতল ৫৮০ টাকা মূল্য লেখা রয়েছে। তবে তারা গায়ে লেখা মূল্যের চেয়ে কিছুটা কম দরে বিক্রি করছেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, গতকাল প্রতি ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৫৩০ থেকে ৫৮০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫১০ থেকে ৫৫০ টাকা। আর এক মাস আগে প্রতি ৫ লিটার বোতলের দাম ছিল ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকা। এ সময়ের ব্যবধানে লিটারপ্রতি দাম বেড়েছে শতকরা ১১ শতাংশ। আর গতকাল প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১১৫ থেকে ১২৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা এবং এক মাস আগে ছিল ১০৫ থেকে ১১০ টাকা। এ সময়ের ব্যবধানে লিটারপ্রতি দাম বেড়েছে শতকরা ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিশ্বের জনসংখ্যাবহুল দেশ চীন ও ভারত ভোজ্যতেলের অন্যতম বৃহৎ ক্রেতা। চীনে করোনাভাইরাস শনাক্তের পর কয়েক মাস সে দেশে ভোজ্যতেল কেনা বন্ধ ছিল। কিন্তু চীনে করোনার সংখ্যা কমে যাওয়ায় তারা ভোজ্যতেল সংগ্রহ শুরু করে। বিশ্ববাজার থেকে বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল মজুত করেছে চীন। সংকটের কারণে বেড়েই চলেছে দাম।

আন্তর্জাতিক নিউজ পোর্টাল ইনডেক্স মুন্ডি ডটকম সূত্রে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত মে মাসে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৬৮৪ ডলার, জুন মাসে তা বেড়ে হয় ৭৫৫ ডলার, জুলাইতে আরও বেড়ে ৮২১ ডলার, আগস্টে বেড়ে ৮৬৬ ডলার এবং সেপ্টেম্বরে দাম আরও বেড়ে হয় ৯০৬ ডলার। মে মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন পাম তেলের দাম ছিল ৫৭৬ ডলার, জুনে বেড়ে হয় ৬৫৬ ডলার, জুলাইতে আরও বেড়ে ৬৯৪ ডলার, আগস্টে দাম বেড়ে হয় ৭৬০ ডলার, সেপ্টেম্বরে দাম আরও বেড়ে বিক্রি হয় ৭৯৮ ডলার এবং অক্টোবরে দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৯১৪ ডলার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে ১৮ লাখ টন। এর মধ্যে শুধু রমজান মাসেই ব্যবহার হয় চার লাখ টন। দেশে করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার পর সারা দেশে অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়। তখন বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বায়ার চীনে ভোজ্যতেল সরবরাহ বন্ধ থাকে। তবে দেশে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করায় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যায়। চীন বিশ্ববাজার থেকে বিপুল পরিমাণ সংগ্রহ করায় মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।