নিজস্ব প্রতিবেদক: তিন মাস পর বাজারে বোতলের সয়াবিন তেলের সরবরাহ বেড়েছে। তবে দাম এখনও কমেনি। আবার বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো বিক্রেতাদের সয়াবিন তেলের সঙ্গে অন্য পণ্যও ধরিয়ে দিচ্ছে। এ ছাড়া রোজার মাসের প্রয়োজনীয় পণ্য ছোলা, পেঁয়াজ, আদাসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে। কয়েকটির দাম বাড়লেও মোটের ওপর স্থিতিশীল রয়েছে শাকসবজির দাম। গতকাল রাজধানীর বিভন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ বেড়েছে। খবর: বিডিনিউজ
দোকানের সামনে ভেতরে তাকে সাজিয়েও রেখেছেন বিক্রেতারা। সয়াবিনের সঙ্গে অন্য পণ্য নিতে হলেও বিক্রেতারা বলছেন, তাতে তাদের আপত্তি নেই। মহাখালী কাঁচাবাজারের ‘মাসুমা জেনারেল স্টোরের’ বিক্রেতা আল আমিন বলেন, ‘১০ কার্টন সয়াবিন তেল পেয়েছি। এক লিটার, দুই লিটার থেকে সব সাইজেরই বোতলের তেল পেয়েছি। আশপাশের দোকানগুলোয়ও তেল আছে। সিটি গ্রুপের ‘তীর’ ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল পেয়েছি। একেকবার একেক কোম্পানির তেল আসে। কখনও ‘রূপচাঁদা’ বা অন্য ব্র্যান্ডের। যদিও এবার তেলের সঙ্গে এক বস্তা লবণ নিতে হয়েছে। কিন্তু লবণ তো চলে। অসুবিধা নেই। পাশের ‘ইসমাইল স্টোরের’ বিক্রেতা জাহিদুল ইসলাম জিহাদ বলেন, আমিও তেল পেয়েছি কয়েক কার্টন। ডিসপ্লেও করেছি। গেল কয়েক সপ্তাহে ডিসপ্লে করার মতো তেল আসেনি।
এর আগে সোমবার দুপুরে মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজার পরিদর্শন শেষে আগামী দুই দিনের মধ্যে সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকট স্বাভাবিক হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। দেশে ভোজ্যতেলের সংকটের শুরু গত ডিসেম্বরে। সে সময় বাজারে সরবরাহ সংকটে দেখা দিলে সরকার এক দফা দাম বাড়ায়। তারপরও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজার থেকে বোতলের সয়াবিন তেল উধাও হতে শুরু করে। খোলা সয়াবিন তেলও ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। রোজা শুরুর আগে বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো আরেক দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বলে গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। রোজা শুরুর পরেও এই কয়েক দিনে পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন না দেখা গেলেও শুক্রবার বাজারে আগের কয়েক সপ্তহের তুলনায় সরবরাহ বেশি দেখা গেছে। সাততলা বাজারে তেলে কিনতে আসা বেসরকারি চাকুরে আসাদুজ্জামান বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে অনেক দোকান ঘুরে তেল কিনতে হয়েছে। আজ এসে দেখি তেলের পরিমাণ বেড়েছে। বেগ পেতে হয়নি তেমন।
কমেছে ছোলা, পেঁয়াজ ও আদার দাম: এ বছর রোজার শুরু থেকেই স্থিতিশীল ছিল ছোলা, ডাবলি, বেসনসহ রোজার প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এর মধ্যে ছোলার দাম কমেছে আরেক দফা। মসলাজাতীয় পণ্যের মধ্যে পেঁয়াজ ও আদার দামও কমেছে। বিক্রেতা আল আমিন বলেন, ছোলার দাম আরও কমেছে। পাইকারি বাজারে ৯০ থেকে ৯২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর আমরা ১০০ থেকে ১০২ টাকা কেজি বিক্রি করছি। রোজার শুরুর দিনও ১১০ টাকা করে বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, আজ চায়না আদা বিক্রি করছি ১৫০ টাকা কেজি, আর দেশি আদা ১৪০ টাকা কেজি। আগে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা ছিল দাম। এ ছাড়া পেঁয়াজের দাম গেল সপ্তাহে প্রতিকেজি ৫০ টাকা থাকলেও এ সপ্তাহে কমে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাজারে দেশি রসুনের দামও কমেছে। গত সপ্তাহে ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হওয়া রসুন শুক্রবার মিলছিল ১২০ টাকায়। কেজিতে ১০ টাকা কমে দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে। বগুড়ার লাল আলু ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালী ও সাততলা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় রসুন ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৪০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ১১০ টাকা, মুগ ডাল ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, খেসারির ডাল ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, মিনিকেট চাল ৮২ থেকে ৯০ টাকা এবং নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির দাম মোটের ওপর স্থিতিশীল: মৌসুম শেষ হওয়ায় আর সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে শীতকালীন কিছু সবজির দাম ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। রোজার আগে সবচেয়ে বেশি উল্লম্ফন হওয়া বেগুনের দাম কমেনি।
বাজারে লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা আর গোল বেগুন ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রোজার আগে হুট করে চড়ে যাওয়া শসা ও লেবুর দামও কমে-বাড়েনি। বাজারে লেবুর হালি আকারভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকা, ক্ষীরা ৬০ টাকা এবং শসা ৫০ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এসব সবজির দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সাততলা এলাকার সবজি বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, বেগুনের দাম রোজার আগে একটু বাড়ে। পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়তি। আমি তো বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে পারব না। শীতকালীন সবজি শিম কেজি ৫০ টাকা, ফুলকপি আকারভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকা প্রতিটি, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা প্রতিটি, লাউ আকারভেদে প্রতিটি ৫০ থেকে ৮০ টাকা, পাকা টমেটো প্রতিকেজি ২৫ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও মুলা ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মহাখালী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, শীতকালীন কিছু সবজি, যেমন শিম, ফুলকপি ও বাঁধাকপির মৌসুম প্রায় শেষ। বাজারে সরবরাহও কমেছে। তাই এসব সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। এক দুই সপ্তাহ পর এসব সবজি আর পাওয়া যাবে না। বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধুন্দুল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুরমুখী ১২০ টাকা, কচুর লতি ১২০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ধনেপাতা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা ও ক্যাপসিকাম ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে লালশাক ১০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, পালংশাক ১০ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা, পুঁইশাক ৫০ টাকা ও ডাঁটাশাক ২০ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। মাছের দামে সামান্য ওঠা-নামা: রোজার আগে ও শুরুর দিনে কিছুটা চড়া ছিল মাছের বাজার। তবে চলতি সপ্তাহে প্রায় সব মাছের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। শুধু বড় আকারের কাতল গত সপ্তাহের তুলনায় ১০ থেকে ২০ টাকা কমে ৩৫০ থেকে ৪২০ টাকা এবং তবে মাঝারি আকারের রুই মাছ কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের মতোই ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা, ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ৭০০ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আকারভেদে চাষের শিং মাছ গত সপ্তাহের মতোই প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মৃগেলও আগের মতো ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০ থেকে ২৩০ টাকা ও চিংড়ি প্রতি কেজি আকারভেদে ৬৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, পাবদা মাছ ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চাষের কৈ মাছ আগের মতো ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকা ও বড় বাইম মাছ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।