বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, দেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে দুর্নীতি। অন্য প্রতিবন্ধকতাগুলো হলোÑঅপর্যাপ্ত অবকাঠামো, অর্থায়নের স্বল্পতা, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা, নীতির ধারাবাহিকতার অভাব, কর প্রদান ব্যবস্থায় জটিলতাসহ মোট ১০টি প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা হয়েছে। জরিপে অংশ নেয়া ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই জানিয়েছেন দুর্নীতির কারণে ব্যবসা করতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। ৬৪ দশমিক ৬ শতাংশ জানিয়েছেন, দুর্নীতি ব্যবসার প্রধান প্রতিবন্ধক। এ ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যক্রমে ব্যবসায়ীদের অনাস্থা রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন। পাশাপাশি ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ব্যবসায় পরিবেশ আরও খারাপ হয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে। এমনকি আমাদের প্রধান প্রতিযোগী ভারত, থাইল্যান্ড, চীন, ভিয়েতনামের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ বলে জানানো হয়।
বাংলাদেশে ব্যবসায় পরিবেশ কেমনÑতা জানতে ব্যবসায়ীদের ওপর যৌথভাবে জরিপটি পরিচালনা করে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডাব্লিউইএফ) ও সিপিডি।
যতবারই জরিপ পরিচালনা করা হয়, তাতেই উঠে আসে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে দুর্নীতি। প্রতিকারে কী ব্যবস্থা নেয়া যায় এর উত্তরও একইÑব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে সব মন্ত্রণালয়কে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়হীনতা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ব্যবসার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত যেন না হয়। কোনো কার্যালয়ে যেন ব্যবসায়ীরা হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ব্যবসার পরিবেশ ভালো করতে সব মন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করতে পারে। ওই টাস্কফোর্সে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি থাকলে তারা এ নিয়ে কথা বলতে পারবেন।
আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, দেশে ব্যবসার পরিবেশ সুন্দর থাকলেই ব্যবসায়ীরা স্বচ্ছন্দে কাজ করতে পারবেন। ব্যবসা করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা অনেক প্রতিকূল অবস্থার শিকার হন। নির্মাণ অনুমোদন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসপ্রাপ্তি, সম্পত্তি নিবন্ধন, ঋণপ্রাপ্তি, কর পরিশোধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সময় আগের চেয়ে কম লাগলেও তা প্রত্যাশিত মানে আসেনি। ব্যবসার বাণিজ্যিক বিরোধ মেটাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় উদ্যোক্তাদের অনেক সময় নষ্ট হয়। তারা সময়মতো উৎপাদনে যেতে পারেন না, জাহাজীকরণ করতে পারেন না। ফলে ক্রয়াদেশ বাতিল হয়। ঋণ পাওয়ার সূচকে অগ্রগতি হলেও ব্যবসা সহজীকরণে আগে পরিকল্পিতভাবে কাজ হয়নি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সূচকে ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যাগুলো শনাক্ত করা হলেও তা ব্যবসায়ীদের সমাধান করতে হয়। নীতিনির্ধারকরা দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে থাকেন। আমরা সেভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের সমস্যা সমাধান করতে পারিনি। বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধান করলেই এফডিআইতে বিদেশিদের আগ্রহী করা যাবে। সব দেশই এখন বিনিয়োগের জন্য উম্মুক্ত। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন। প্রয়োজনে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নিতে হবে। চাঁদাবাজি, অনৈতিক লেনদেন, পরিবহন খরচসহ যেসব বিষয়ে ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ আছে, সেগুলো নিরসনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে।