ব্যয় কমিয়ে মুনাফা ধরে রেখেছে রবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দেশের শীর্ষ দ্বিতীয় টেলিকম খাতের কোম্পানি রবি আজিয়াটা। চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে তারা। সেখানে দেখা যায় প্রথম তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কোম্পানিটির আয় কমেছে। তবে আয় কমলেও কর-পরবর্তী মুনাফা বেড়েছে প্রায় ১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা বা ১৭ দশমিক ৬২ শতাংশ।

অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় প্রথম প্রান্তিক শেষে আগের বছর কোম্পানিটি আয় করে দুই হাজার ৫১৬ কোটি টাকা, যা এ বছর কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ৩৪১ কোটি টাকায়। ফলে চলতি বছরে তিন মাসে কোম্পানিটির আয় কমে প্রায় ১৭৫ কোটি ৯ লাখ টাকা বা ছয় দশমিক ৯৫ শতাংশ। তবে আয় কমলেও মুনাফা বেড়েছে কোম্পানিটির। এদিকে কোম্পানিটির দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার খরচও (যা সরাসরি পণ্য উৎপাদন বা বিক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত নয়) চলতি বছরে বেড়েছে প্রায় ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ বা ২৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

মূলত বিক্রয় ও বিতরণ ব্যয় কমিয়ে মুনাফায় আসে টেলিকম খাতের এই কোম্পানিটি। কোম্পানিটি আগের বছর প্রথম প্রান্তিকে বিক্রয় ও বিতরণ ব্যয় দেখায় ৩৮৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা, যা এ বছর একই সময়ে কমিয়ে আনে ২৭৯ কোটি ৮২ লাখ টাকায়। আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরে কোম্পানিটির বিক্রয় ও বিতরণ ব্যয় কমে প্রায় ১০৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বা ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তা ছাড়া কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকে আগের বছর একই সময় সরকারকে কর দেয় ১৬২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, যা এ বছর তারা কর বাবদ পরিশোধ করে ১০৪ কোটি সাত লাখ টাকা। তাতে এ খাতেও তাদের আগের বছরের তুলনায় খরচ কমে প্রায় ৫৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বা ৩৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এদিকে ব্যাংকঋণের সুদ-সংক্রান্ত ব্যয়ও কমেছে সাত দশমিক ৭০ শতাংশ বা ১৪ কোটি ০৯ লাখ টাকা।

চলতি আর্থিক ছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে কোম্পনিটির শেয়ারপ্রতি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ পয়সা বেড়ে বর্তমানে ২৪ পয়সায় এসে দাঁড়িয়েছে। এ সময় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ টাকা ৩২ পয়সায়, যা ২০২৪ সালের ৩১ মার্চে ছিল ১২ টাকা ৯৬ পয়সা। চলতি বছরে প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ২০ পয়সা, যা আগের বছর একই সময় ১ টাকা ৭৪ পয়সা ছিল।

কোম্পানিটি ২০২০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটেগরিতে লেনদেন হচ্ছে। তালিকাভুক্তির পর থেকেই ডিভিডেন্ট ঘোষণার বিষয়ে ধারাবাহিক ঊর্ধ্বগতি হয়েছে কোম্পানিটির। ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত কোম্পানিটি গড়ে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ লোভাংশ ঘোষণা করেছে। সবশেষ ২০২৪ সালে ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে বিনিয়োগকারীদের জন্য। কোম্পানিটি ছয় হাজার কোটি টাকা অনুমোদিত মূলধনের বিপরীতে পরিশোধিত মূলধন ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ এক হাজার ৬২২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কোম্পানিটির মোট ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৫টি শেয়ার রয়েছে। ডিএসইর সর্বশেষ তথ্যমতে, মোট শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে ৯০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে ৮ দশমিক ০২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

এদিকে গতকাল ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারদর শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ বা ১০ পয়সা কমে প্রতিটি সর্বশেষ ২৪ টাকায় হাতবদল হয়, যার সমাপনী দরও ছিল একই। দিনজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বোচ্চ সর্বনিম্ন ২৪ টাকা থেকে সর্বনিম্ন ২৪ টাকায় লেনদেন হয়। দিনজুড়ে কোম্পানিটির ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ ৩২ হাজার ৮৯৫টি শেয়ার মোট ৫ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৫ বার লেনদেন হয়, যার বাজারদর ১২ হাজার ৬২৩ কোটি ৪১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।