ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন রূপগঞ্জের গাছিরা

প্রতিনিধি, রূপগঞ্জ: শীত আসছে। আর এই শীতের দিনে গ্রামবাংলার অন্যতম আকর্ষণীয় ঐতিহ্যবাহী খাবার পিঠাপুলি। আর এই পিঠা-পায়েশ তৈরিতে প্রধান উপদান খেজুরের রস বা গুড়। আর তাই শীতের আগমনে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী এই  খেজুরের রস আহরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন রূপগঞ্জের গাছিরা। শীতের শুরুতেই  খেজুর গাছ প্রস্তুত করে রস আহরণের কাজ শুরু করেছেন তারা।

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের প্রতীক এই মধুবৃক্ষকে ঘিরে রূপগঞ্জের গ্রামীণ জনপদে শুরু হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। রস আহরণের জন্য প্রথমে হাতে দা ও কোমরে দড়ি বেঁধে খেজুর গাছে উঠে নিপুণ হাতে মনোযোগসহকারে গাছ চাছাছোলা করেন গাছিরা। পরে  ছোলা স্থানে নল বসানো হয়। কাকডাকা ভোর েেথকে সকাল ৮-৯ পর্যন্ত চলে গাছ থেকে রস সংগ্রহ। আর দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রস বিক্রি করেন তারা। 

আবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে রস সংগ্রহের জন্য গাছে গাছে কলস বাঁধার কাজ। পেশাদার গাছির পাশাপাশি মৌসুমি গাছিরাও রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় খেজুর গাছে শোভা পায় রসের হাঁড়ি। আর খেজুরের রস দিয়ে পিঠাপুলি তৈরির পাশাপাশি এর গুড় দিয়ে মুড়িমোয়া, চিড়ার মোয়া তেরির ধুম পড়ে যায়।

উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের বরুনা এলাকার গাছি জয়নাল মিয়া বলেন, রূপগঞ্জে  খেজুর গাছ আর আগের মতো নেই। রাস্তার ধারে কিংবা বিলের আইলে প্রাকৃতিকভাবে  বেড়ে ওঠা কিছু খেজুর গাছ রয়েছে। সেগুলো থেকে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। এখন আগের মতো বাণিজ্যিকভাবে খেজুর রস সংগ্রহ করা যায় না। বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকলেও গাছের অভাবে রস সংগ্রহ করা হয় না।  খেজুর গাছের পরিমাণ অনেক কমে গেছে। নির্বিচারে খেজুর গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। মূূলত নতুনভাবে রোপণ না করার কারণেই খেজুর গাছ আজ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এমনিতে এসব গাছ কেউ শখেও  রোপণ করেন না। তার ওপর প্রাকৃতিকভাবে  বেড়ে ওঠা এসব গাছও কেটে ফেলা হলে আমাদের এ পেশা ছেড়ে দিতে হবে। ইতোমধ্যে অনেক গাছিই এখন এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। তাছাড়া খেজুর গাছ কাটা  বেশ কষ্টেরও। রসও তেমন পাওয়া যায় না। খেজুর গাছ খুব অবহেলিত একটি গাছ।  কেউ এসব গাছের পরিচর্যা করে না। ফলে অপরিপুষ্ট ও রুগ্্ণ হয়ে পড়া অধিকাংশ গাছ  থেকে আশানুরূপ রস পাওয়া যায় না। তাই  বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাভবান হওয়া দূরের কথা, পরিশ্রমের দামও ওঠে না। তবে তীব্র শীতে রসের ভালো দাম পাওয়া যায়। শীতের পিঠাপুলির জন্য এ এলাকায় রসের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে একদিন গাছিরা খেজুর গাছ কাটা ছেড়ে দেবেন।

বর্তমানে যেভাবে বৃক্ষ নিধন শুরু হয়েছে, তাতে এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে সড়কের পাশে  খেজুর গাছ রোপণের উদ্যোগ না নিলে অচিরেই এ গাছ হারিয়ে যাবে।