ইআরএফ সংলাপে এফবিসিসিআই সভাপতি

ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ানো হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যাংকঋণের বিদ্যমান সুদহার বাড়ানো হলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং শিল্প সচল রাখতে ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ানো যাবে না। সুদহার ৯ শতাংশ তুলে দিলে শিল্প তার সক্ষমতা হারাবে।

অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ইআরএফ সংলাপে গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনের পল্টন টাওয়ারে ইআরএফ কার্যালয়ে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। জসিম উদ্দিন সুদহার না বাড়িয়ে ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে জোরালো মত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সুদহার বাড়ানো হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমনটা ঠিক নয়।

তিনি বলেন, যখন সুদহার কমানো হয়েছে, তখন দেশে অনেক বিনিয়োগ বেড়েছে। ঋণের সুদহার বাড়ানোর বিষয়ে একেক ধরনের এজেন্ডা থাকে গবেষণা সংস্থাগুলোর। তারা একেক জনের প্রতিনিধিত্ব করে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায় বলে তিনি মন্তব্য করেন। জসিম উদ্দিন বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে, এর ফলে শিল্প টিকে থাকবে কি না? বর্তমান অবস্থায় সুদহার বাড়ালে শিল্প কোথায় যাবে। তিনি বলেন, বাড়তি ব্যয় কমিয়ে ব্যাংকের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। ব্যয়বহুল শাখাসহ ব্যাংকের অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যয় কমাতে হবে।

এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব মুদ্রা ডলার শক্তিশালী করতে সুদহার বাড়িয়েছে। তাদের ফর্মুলা আমাদের দেশে বাস্তবায়ন

করলে চলবে না। দেশের শিল্পের কথা বিবেচনা করেই নীতি গ্রহণ করতে হবে।

জ্বালানি স্বল্পতা মোকাবিলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কয়লাভিত্তিক জ্বালানিতে যেতে হবে। নিজস্ব কয়লা ব্যবহার করতে হবে। দেশের উন্নয়নে শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সহযোগিতা লাগবে। বাংলাদেশ বিশ্বের নবম ভোক্তা বাজার হচ্ছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বাজার ঘিরে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে। বিদ্যমান বিনিয়োগের সঙ্গে আরও নতুন বিনিয়োগ এলে তাদের ধরে রাখতে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

জ্বালানি স্বল্পতার বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ এখন বড় ইস্যু। কভিডের সময় সিদ্ধান্ত ছিল কারখানা বন্ধ করা যাবে না। এটা সাহসী সিদ্ধান্ত। চলমান সংকটেও তেমন সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। কারণ গত বছর ৫২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি হয়েছে। তখন ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বলা হলেও বাস্তবে এতটা ছিল না। জসিম উদ্দিন আরও বলেন, এখন গ্যাস-বিদ্যুৎ না পেলে বিদেশি ক্রেতার অর্ডার অনুযায়ী পণ্য দিতে ব্যর্থ হবো আমরা। এর ফলে ক্রেতারা একবার ফিরে গেলে আর পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বন্ধ করাসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়ে শিল্পে গ্যাস চালু রাখতে হবে। 

জ্বালানি সরবরাহের বিষয়ে তিনি একটি প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়েছে. তাই গ্যাস বেশি দামে আমদানি করতে হবে। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা শিল্পকারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস নিশ্চিত করার জন্য বেশি দাম দিতে রাজি আছেন।

অর্থপাচারের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু বলেছে, আমদানির আড়ালে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত মূল্য দেখানোর প্রমাণ পেয়েছে তারা। আন্ডার ইনভয়েস ও ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। তাদের উচিত জড়িতদের আইনের আওতায় আনা।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, যেসব পণ্য আমদানির প্রয়োজন বেশি, তা দেশে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলে আমদানিতে ডলারের ব্যয় কমে যাবে। তাতে ডলার ঘাটতি কিছুটা লাঘব হবে। এদিকে এখন নজর দেয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি শুধু শহরকেন্দ্রিক নয়, এখন গ্রামেরও উন্নয়ন হয়েছে। এ কারণে শুধু কর ব্যবস্থা শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে উপজেলা পর্যায়ে কার্যক্রম বাড়ানো দরকার। ২১০০ সালের এজেন্ডা (ডেল্টা প্ল্যান) এক দিনে হবে না। এটি ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য দেশের শিল্পের উন্নয়ন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে।

ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহসভাপতি শফিকুল আলম। অনুষ্ঠানে ইআরএফের শতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।