সুশাসন ও জবাবদিহি যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ব্যাংক খাতে এ দুটি বিষয়ের অভাব প্রকট। ফলে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ব্যাংক খাতে সুশাসন নেই, এটি অস্বীকার করবে না কেউ। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, কিংবা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সুফল মিলছে না বলেই প্রতীয়মান। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া, ঋণ আদায়ে ব্যর্থতা প্রভৃতি দেখে এখন সাধারণ মানুষও ব্যাংক খাতের দুর্বলতা বোঝেন। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে সংঘটিত হল-মার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি এবং অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট গ্রুপ প্রভৃতি অব্যবস্থাপনার পর নতুন কেলেঙ্কারির খবর আসছে। ব্যাংক খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থায় চিড় ধরেছে অনেক আগেই।
ঠিক এ সময় অগ্রণী ব্যাংকে আরেকটি জালিয়াতির খবর প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে। খবরে বলা হয়, একই পণ্যের মূল্য গ্রাহককে দুবার পরিশোধ করেছে ব্যাংক। মাত্র এক বছর তিন মাস ১৮ দিনের ব্যবধানে এই ঘটনা ঘটেছে ১৪ বার। দোষ ঢাকতে তৈরি করা হয়েছে ফোর্সড লোন, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। প্রায় দেড় বছর আগে ঘটে যাওয়া অভিনব এই জালিয়াতির টাকা আজও ফেরত আসেনি। অগ্রণী ব্যাংকের নিজস্ব তদন্তে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যাগপাই গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মেসার্স ম্যাগপাই নিটওয়্যার লিমিটেডকে রপ্তানি বিলের বিপরীতে ১৪ বার দ্বিগুণ টাকা দিয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখা। তদন্ত চলাকালে প্রধান শাখা বরাবর প্রয়োজনীয় নথিপত্র সরবরাহ করার জন্য বিভিন্ন সময়ে মৌখিক এবং তিনবার লিখিতভাবে অনুরোধ করা সত্ত্বেও তা সরবরাহ করা হয়নি।
ব্যাংকটির এমডি অবশ্য বলেছেন, ভুলবশত এমনটি হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, গ্রাহক ও ব্যাংকারদের যোগসাজশে এখানে কোনো কাণ্ড ঘটেনি। তবুও ‘ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায়’। আসলে কী ঘটেছিল এবং কীভাবে সমাধান করা হচ্ছে, এ বিষয়ে ব্যাংককেই সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে।
ব্যাংক খাতের জন্য প্রণীত নীতিমালা ও আইনকানুন, কোম্পানি আইন, আন্তর্জাতিক নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানের। তবুও মাঝে মধ্যে জালিয়াতি হয়। তাই সব ধরনের নীতি অনুসরণে ব্যাংকগুলোকে সব পর্যায়ে বাধ্য করতে হবে।
নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাংক জালিয়াতি কঠোরভাবে দমনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বর্তমান সরকার। তবে আমাদের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে কারও নিয়ন্ত্রণ নেই এবং এ খাতের সংশ্লিষ্টদেরও কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না বলেই প্রতীয়মান। সরকারের উচিত অনিয়ম-দুর্নীতি রোধ করে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যবস্থা নেওয়া।