ব্যাংকের সঞ্চিতি সংরক্ষণ নিশ্চিতে উদ্যোগ নিন

কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সমপরিমাণ সঞ্চিতি জমা রাখার বিধান রয়েছে। মূলত ব্যাংকগুলো যাতে আগ্রসী ঋণ দেয়ার মাধ্যমে যাতে সাধারণ আমানতকারীদের আমানত ঝুঁকির মধ্যে না ফেলতে পারে, সে জন্যই এই ব্যবস্থা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গাইডলাইন অনুসারে এই সঞ্চিতি রাখতে হয়। সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করার ফলে ব্যাংকগুলো মুনাফা হ্রাস পায়। যে কারণে অনেক ব্যাংক সঠিকভাবে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে না। তারা ব্যাংকের মুনাফা বাড়িয়ে দেখিয়ে বোঝাতে চায় যে, ব্যাংকটির স্বাস্থ্য অনেক ভালো আছে। এতে সাময়িকভাবে ব্যাংকগুলো কিছুটা সুবিধা পেলেও চূড়ান্ত বিচারে এমন কর্মকাণ্ড ব্যাংকের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই ব্যাংকগুলো যাতে সঠিকভাবে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘আট ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ২৬ হাজার কোটি টাকা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি এবং বেসরকারি খাতের পাঁচটি ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি বিদ্যমান। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভিশন ঘাটতি অগ্রণী ব্যাংকে। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এ ঘাটতি সবচেয়ে বেশি ন্যাশনাল ব্যাকে। প্রভিশন ঘাটতি থাকলে বিষয়টি ব্যাংকের মূলধনের ওপর সরাসরি আঘাত হানে। এর ফলে ব্যাংকের ঋণ প্রদান ও এলসি খোলার সক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যে। এতে করে কর্মসংস্থান, মূল্যস্ফীতি এবং সামগ্রিকভাবে দেশের পুরো অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংক বিধিবিধান পরিপালনে কঠোর না হলে ব্যাংকগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।

সম্প্রতি সময়ে দেশের ব্যাংক খাত সম্পর্কে নেতিবাচক খবরই বেশি শোনা যাচ্ছে। বিশেষ করে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের পাশাপাশি ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে তাদের সিআরআর ও এসএলআর পরিপালনে ঘাটতির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। ব্যাংকগুলোর ওপর যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ দুর্বল হয়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে। দেশের ব্যাংক খাতে নানা ক্ষত আগে থেকেই রয়েছে। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংকগুলো আশানুরূপ পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। এর মধ্যে একটি ব্যাংক তো দেউলিয়াত্বের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য বাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুনঃঅর্থায়নের মাধ্যমে সে ব্যাংকটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবে ব্যাংকগুলো যদি এতে মূলধন সংকটের দিকে ধাবিত হতে থাকে, তাহলে সাধারণ আমানতকারীরা কোথায় আমানত করবেন? ব্যাংক খাতের প্রতি তাদের আস্থা হ্রাস পাবে। কাজেই দেশে ব্যাংক পরিচালনা বিষয়ে যেসব আইন রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক যেসব গাইডলাইন পরিপালনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেগুলোর পরিপালন নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তৎপর হতে হবে। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে উদ্যোগী হবেন বলেই প্রত্যাশা।