নিজস্ব প্রতিবেদক: কোনো ব্যাংক বা ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) অবসায়িত হলে তার সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে। এটি আইনে বলা আছে। তবে অবসায়িত হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে বিমা তহবিল থেকে প্রত্যেক আমানতকারী এক লাখ টাকা করে পাবেন।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়িত হলে আমানতকারীরা অর্থ ফেরত পাবেন কি না এ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তা স্পষ্ট করতে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ব্যাংক অবসায়িত হলে বিদ্যমান ‘ব্যাংক আমানত বিমা আইন, ২০০০’ অনুযায়ী বর্তমানে যে কোনো পরিমাণের আমানতের বিপরীতে গ্রাহক সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পাবেন। এটি ১৮০ দিনে মধ্যেই হবে, যা নির্ধারিত। কিন্তু সময়ের আলোকে এটি বৃদ্ধির কোনো সুযোগ রাখা হয়নি আইনে। নতুন আইনে এ বিধান সংযোজন করে খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
জানা গেছে, এজন্য বিমার এই অঙ্ক এক লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে দুই লাখ টাকা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। আগে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি ছিল না। এখন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে। এজন্য আইনের নাম পরিবর্তন করে ‘আমানত সুরক্ষা আইন, ২০২০’ করা হচ্ছে। কোম্পানি অবসায়িত হওয়ার পরই আমানত বিমা তহবিল হতেই এক লাখ করে টাকা দেওয়া হবে। আমানতকারীর বাকি অর্থ পরিশোধ করা হবে ব্যাংকের সম্পত্তি বিক্রি করে।
অপরদিকে ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১’-এর ৭৪ ধারা অনুসারে কোনো তফসিলি ব্যাংক অবসায়িত হলে ওই ব্যাংকের সম্পদ হতে সব আমানতকারীর পাওনা পরিশোধের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।
মুখপাত্র আরও জানান, অবসায়িত হওয়া ব্যাংকের সম্পত্তি বিক্রির অর্থ দিয়ে প্রথমে ব্যক্তি গ্রাহকের টাকা এবং পর্যায়ক্রমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। সবশেষে টাকা পাবে প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আর কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মুখপাত্র।
ব্যাংকের সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতের সমপরিমাণ অর্থ পাওয়া না গেলে কীভাবে পরিশোধ হবেÑএমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যাংক যখন ঋণ দেয়, তার বিপরীতে জামানত থাকে। তা দিয়েই মেটানো সম্ভব। যদি তা যথেষ্ট না হয়, এর মানে হচ্ছে অর্থ অন্য কোথাও গেছে। আইন অনুযায়ী এজন্য ব্যাংকের দায়ী ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ আদায় করে পরিশোধ হবে আমানতকারীর অর্থ।
জানা গেছে, বর্তমানে আমানত বিমা তহবিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক এ অর্থ সরকারের বিভিন্ন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করে মুনাফা অর্জন করছে। যা তহবিলে যোগ হয়। এছাড়া তফসিলি ব্যাংকের দেওয়া প্রিমিয়ামের অর্থ যোগ হয় এ তহবিলে।
এক্ষেত্রে কত সময় লাগবে তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে। প্রসঙ্গত, অবসায়িত ব্যাংকের সম্পত্তি বিক্রিলব্ধ অর্থ দিয়ে প্রথমে প্রতিষ্ঠানের দায় পরিশোধ করা হয়। অর্থাৎ, অন্য কোথাও ওই ব্যাংকের ঋণ বা পাওনা থাকলে তা পরিশোধ করা হবে। অবশিষ্ট অর্থ দিয়ে আমানতকারী ও পরিচালকদের পাওনা পরিশোধ করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ের আমানতকারীর অর্থ পরিশোধে প্রয়োজনে পরিচালকদের জমা করা পরিশোধিত মূলধনের অর্থ থেকে দেওয়া হবে। এরপর বাকি অর্থ পাবেন পরিচালকরা।