ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের সীমা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তফসিলি ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার সীমা বাড়ছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সিকিউরিটিজ ভবনে আয়োজিত এক বৈঠকে লভ্যাংশের সীমা বাড়াতে সম্মত হয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে করণীয় পদক্ষেপ নিতে উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে গত বছর ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ দেয়ার সীমা সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এই সীমা গতকালের সভায় ৩৫ শতাংশে বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করে একমত হয়েছে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এছাড়া বৈঠকে তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নগদ লভ্যাংশের পাশাপাশি বোনাস লভ্যাংশ দিতে পারে, সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলো আগে বেঁধে দেয়া সীমার চেয়ে পাঁচ শতাংশ বেশি লভ্যাংশ দিতে পারবে। এ হিসেবে সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দেয়া যাবে। এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনে লভ্যাংশের সর্বোচ্চ সীমসা ৩০ শতাংশ বেঁধে দিয়েছিল।

অন্যদিকে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নগদ লভ্যাংশের সীমা না বাড়ানো হলেও বোনাস দেয়ার সুযোগ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের পাশাপাশি সুবিধাজনক হারে বোনাস দেয়া যাবে।

পুঁজিবাজারে প্রভাব পড়তে পারে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করার একটি নির্দেশনা থাকলেও লভ্যাংশ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কোনো আলোচনা করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। বিএসইসি বিষয়টি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে জানালে দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বৈঠকে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বিতভাবে একসঙ্গে কাজ করাসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এ বৈঠকে বিএসইসির পক্ষে চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিমসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে একজন নির্বাহী পরিচালকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বের জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একটি ব্যাংক সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিতে পারবে। এর মধ্যে ১৫ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ছিল। তবে গতকালের আলোচনায় সেটা আরও পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করার কথা বলা হয়েছে। এখন এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৩৫ শতাংশের মধ্যে বোনাস বা নগদ লভ্যাংশ কত করে হবে, সেটা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট করবে।

প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এক প্রজ্ঞাপনে ব্যাংকের লভ্যাংশের সর্বোচ্চ সীমা ৩০ শতাংশ বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আর চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের সর্বোচ্চ সীমা ১৫ শতাংশ বেঁধে দেয়া হয়। এ নির্দেশনার তীব্র প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম অনেক কমে যায়। সব মিলিয়ে বাজার অস্থির হয়ে উঠে।

বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সফল বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে মুদ্রাবাজার ও পুঁজিবাজারের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বৈঠকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের সীমা বাড়াতে সম্মত হয়েছে, যা ইতিবাচক।