ব্যাংক খাতের কেলেঙ্কারি বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের কেলেঙ্কারি ব্যবসায়ীদের আস্থাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে, যা মূলত ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ভঙ্গুর অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। প্রতিবার বাজেটে সরকারি ব্যাংকগুলোর জন্য অনাকাক্সিক্ষত ও নীতিবহির্ভূতভাবে অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়। এ ধরনের নিয়মবহির্ভূত সুবিধাকে নিয়মের আওতায় আনা না হলে প্রকৃত বিনিয়োগকারীরা ব্যাংকের ঋণ সুবিধা থেকে আরও বঞ্চিত হবেন।

বেসরকারি সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) প্রকাশিত ত্রৈমাসিক আর্থিক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়। গতকাল রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান এ পর্যালোচনা তুলে ধরেন। এতে তিনি দেশের অর্থনীতির জন্য ছয়টি প্রধান চ্যালেঞ্জকে চিহ্নিত করে বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগের শ্লথ গতি, শ্রম বাজারের মন্দাভাব, রফতানির প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি, রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রভাব, ভঙ্গুর  ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক অদক্ষতার কারণে সার্বিক অর্থনীতি ঝুঁকিতে রয়েছে।

এদিকে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন না হওয়ায় কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ফলে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে চাকরিবিহীন অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে, যা আশঙ্কাজনক।

সভায় প্রস্তাবিত বাজেটকে সার্বিক প্রত্যাশার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে উল্লেখ করে বলা হয়, বাংলাদেশ একটি বেসরকারি বিনিয়োগ খাত নির্ভর অর্থনীতি। অথচ গত কয়েক বছরে বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমে বেসরকারি খাত কিছুটা উপকৃত হবে বলে আশা করা যায়। কিন্তু এক্ষেত্রেও সুস্পষ্ট নির্দেশনার ঘাটতি রয়েছে বাজেটে। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের বিষয়ে স্পষ্ট রোডম্যাপ নেই বলেও উল্লেখ করা হয় পর্যলোচনায়।

নতুন ভ্যাট আইন সম্পর্কে ড. সেলিম রায়হান বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ-সংক্রান্ত প্রস্তুতিতে পিছিয়ে রয়েছে সরকার। শুল্কের অবকাঠামো এবং শুল্ক ও কর প্রশাসনের দক্ষতা নিশ্চিত করতে না পারলে ভ্যাট সংস্কারের কার্যক্রম বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করতে পারে। শুল্ক অবকাঠামোতেও  গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক হলেও তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভুল লক্ষ্যমাত্রা, লিকেজ ও দুর্নীতি এড়ানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগের পরামর্শ দেওয়া হয় সভায়।

এছাড়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরের রফতানির প্রবৃদ্ধি গত বছরের চেয়ে অর্ধেকে নেমেছে। এজন্য আন্তর্জাতিক ও জাতীয় উভয় ধরনের কারণই দায়ী। এর পাশাপাশি নীতি বাস্তবায়নের ব্যর্থতা রয়েছে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ আনার বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।