ব্যাংক খাতে মূলধন বাড়াতে ব্যবস্থা নিন

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন লুটপাটের প্রভাবে মূলধন রাখার হার স্মরণকালের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে নেমেছে। লুটপাট ও টাকা পাচারের কারণে ব্যাংক খাতে ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বা সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। কিন্তু আয় না হওয়ায় এর বিপরীতে চাহিদা অনুযায়ী মূলধন রাখতে পারছে না। ফলে মূলধন ঘাটতি বেড়ে স্মরণকালের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমেছে। খেলাপি ঋণের লাগামহীন বৃদ্ধি ব্যাংকগুলোর মূলধন ক্ষয় করে ফেলেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে লুটপাট হলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। তখন ব্যাংকের আয় কমে যায়। ফলে প্রভিশন রাখার চাহিদা বেড়ে যায়। কিন্তু ব্যাংকগুলো আয় কমার কারণে চাহিদা অনুযায়ী প্রভিশন রাখতে পারে না। ফলে প্রভিশন ঘাটতি বাড়তে থাকে। এতে মূলধন ঘাটতিও বাড়তে থাকে। লুটপাটের কারণে দুর্বল ব্যাংকগুলোই মূলধন ঘাটতি বেশি। এর মধ্যে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর ঘাটতি বেশি। ঢালাওভাবে বলা যায়, মূলধন ঘাটতি কখনোই পুরো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। সব সরকারের আমলেই কমবেশি লুটপাট হয়। নতুন সরকার এলে পুরোনো লুটপাটকারীরা দল বদলায় কিংবা নতুন লুটপাটকারীরা যুক্ত হয়। ফলে লোপাট চলতেই থাকে।

অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো ব্যাংক খাত। কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের পুঁজি জোগান থেকে শুরু করে চলতি মূলধন ও অন্যান্য সব অর্থায়ন হয় ব্যাংক থেকে। তাই ব্যাংক খাত ঠিক না করলে ধীর হয়ে পড়া সার্বিক অর্থনীতিতে শিগগিরই গতি ফেরানো কঠিন হবে। তাই ব্যাংক খাত সংস্কার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা করা প্রয়োজন। না হলে এ খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো কঠিন হবে।
ব্যাংক খাত অন্যের টাকা দিয়ে ব্যবসা করে। এখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও আস্থা অতি গুরুত্বপূর্ণ। খেলাপি ঋণ উদ্ধার করা, সুশাসন ফেরানো এখন ব্যাংক খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর নিজেদের ভাবমূর্তি ফেরানোও বড় কাজ।

সাবেক সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু অদূরদর্শী ও অসময়োপযোগী নীতি-উদ্যোগ এবং ঘোষণায় আর্থিক খাতে অস্থিরতা বিরাজ করেছে। দেখা গেছে। মুদ্রানীতিকে ব্যবহার করে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সময়মতো ব্যবস্থা নিতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

সরকারি ব্যাংকের তুলনায় বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় বেশি অনিয়ম-জালিয়াতির ঘটনা ঘটছে। সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় প্রভাবশালীদের মালিকানাধীন ব্যাংক ও তাদের ঋণ তদারকি না করার প্রবণতা থেকে শূন্য সহনশীলতায় বেরিয়ে আসতে হবে। এটি ঠিক, রাজনীতি ঠিক না হলে আর্থিক খাত সহজে ঠিক হবে না। এ জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ব্যাংক খাত ঠিক করার উদ্যোগ নিতে হবে। সংস্কার না করে এখন আর এ খাতের উন্নয়ন করার সুযোগ নেই। এভাবে চলতে থাকলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। সব বিবেচনায় সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।