ব্যাংক খাতে সুশাসন ফেরাতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখুন

‘আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে হযবরল অবস্থা’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা শুনতে খারাপ লাগলেও নিঃসন্দেহে আশাজাগানিয়া খবর বলেই ধারণা। নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পরও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অর্ধেকের বেশি ব্যাংক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারেনি। ফলে এসব ব্যাংক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারছে না, আবার লভ্যাংশও ঘোষণা করতে পারছে না। আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মনীতি পরিপালন করতে গিয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ২১টি কোম্পানি আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে সভা ডেকেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। একই অবস্থা রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোরও। শেয়ারবাজারের নিয়ম অনুযায়ী, আর্থিক বছর শেষ হওয়ার সর্বোচ্চ চার মাসের মধ্যে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী, আর্থিক বছর শেষ হওয়ার চার মাসের মধ্যে আর্থিক হিসাব চূড়ান্ত করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণা করতে হয়। কিন্তু তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ ব্যাংকের ক্ষেত্রে এবার সেটি হয়নি।

গত মার্চে ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণাসংক্রান্ত নতুন নীতিমালায় বলা হয়, নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণে বা যথাযথ প্রভিশনিংয়ে ব্যর্থ যেসব ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিলম্ব সুবিধা নিয়েছে, তারা ২০২৪ সালের জন্য কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এই শর্তের বেড়াজালে আটকে গেছে বেশিরভাগ ব্যাংকের লভ্যাংশ। এছাড়া গত ৫ আগস্টের পর মালিকানা-ব্যবস্থাপনা পরিবর্তিত হওয়া ব্যাংকগুলোর লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণ, নিরাপত্তা সঞ্চিতিসহ আর্থিক বিভিন্ন সূচকের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বনিবনা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন পর এবারই পেশাদারির সঙ্গে ব্যাংক পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে লুকিয়ে রাখা অপকর্মের অনেকগুলোই নিয়ন্ত্রক সংস্থার গোচরে আসতে পেরেছে। কথিত দেশসেরা প্রভাবশালী ব্যাংক এবং প্রভাবশালীদের গোমর ফাঁক হয়ে গেছে। দেখা গেছে, বেশিরভাগ ব্যাংকই লোকসানে চলে গেছে। এসব ব্যাংকে ঋণদানে অনিয়মের নানা ঘটনা রয়েছে।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৬ ব্যাংকের মধ্যে সিটি, ব্র্যাক, পূবালী, ডাচ্-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন, যমুনা, মিডল্যান্ড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এনসিসি, প্রাইম, শাহ্জালাল ইসলামী, ট্রাস্ট, উত্তরা ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। এর মধ্যে ১০ ব্যাংকের মুনাফা কমেছে এবং ৫ ব্যাংকের বেড়েছে। লাভ-ক্ষতির বিচারে ব্যাংকগুলোর এ অবস্থার এতটা আশাব্যঞ্জক না হলেও ব্যাংক খাতে দুষ্ট লোকদের দৌরাত্ম্য কমছে এবং অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি ফিরছে, এটি সুখবরই বটে।

আমরা দেখতে চাই, প্রভাবশালীদের মালিকানায় থাকা ব্যাংক ও তাদের ঋণগুলো আর তদারকির বাইরে থাকবে না। দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার চেষ্টা ব্যাংক খাতে ভীতি ছড়াবে না, ঋণ আদায় কঠিন হয়ে পড়বে না এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা খর্ব হবে না। আমরা এত দিনের সমস্যা এক দিনে সমাধান হবে, এমন উচ্চাশা পোষণ করি না। কিন্তু সুশাসন ফেরানো এবং ব্যাংকগুলোর ভাবমূর্তি ফেরানোয় অংশীজনরা আন্তরিক হলে আস্থার সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।