ব্যাংক খাত থেকে কম ঋণ নেয়ার অভিপ্রায় প্রশংসনীয়

বাজেটঘাটতি মেটাতে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে কম ঋণ নেবে সরকার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এ লক্ষ্যমাত্রা মোট বাজেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। আগামী অর্থবছরেও তা-ই থাকছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার হতে পারে। এ বাজেট থেকেই ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আগামী অর্থবছরে আড়াই লাখ কোটি টাকার নিচে নামিয়ে আনা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি উৎস থেকে এ ঋণ নেয়া হবে। বাজেট প্রণয়নের মূল দায়িত্বে থাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, দেশি-বিদেশি ঋণের স্থিতি বেশি হওয়ার কারণে সুদ পরিশোধ বাবদ বড় অঙ্কের বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে আগামী বাজেটেও।

বাজেটঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে সরকার দুভাবে ঋণ নেয়। একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে, অন্যটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়ার সক্ষমতা কমে যায় ব্যাংকগুলোর। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। তাতে ভোগান্তি বাড়ে সাধারণ মানুষের। অর্থনীতিরই সূত্র এটি।
উন্নয়ন বাজেটসহ যে কোনো ব্যয় নির্বাহে সরকারে প্রধান আর্থিক জোগান আসে রাজস্ব সংগ্রহ থেকে। রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় বছরের পর বছর ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে। খরচের পাশাপাশি ব্যাংকঋণও বেড়ে চলেছে। এমন দৃষ্টান্তও আছে, ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, অর্থবছরের ছয় মাস না যেতেই তার পুরোটা নিতে হয়েছে। এখন সরকার সে ধারা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আমারা এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। সত্যি বলতে, আমাদের মূল সমস্যা রাজস্ব আদায়ে। রাজস্ব আদায় বাড়ানো গেলে সরকারকে এত বেশি ঋণ নিতে হতো না। বিশ্লেষকরো বলছেন, ব্যাংক খাত থেকে আগামী অর্থবছরে সরকার বেশি ঋণ নেবে না; বরং সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি থেকে ভালো অর্থ সংগ্রহ করবে। গত জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার বেড়েছে। তাই মানুষ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির জন্য ব্যাংকঋণ অন্যতম কারণ হলেও সরকারের হাতে তেমন বিকল্প নেই। তবে আশার কথা হচ্ছে, লক্ষ্যমাত্রার ঋণ পুরোটা সরকার ব্যাংক খাত থেকে নেয় না। উদাহরণস্বরূপ, চলতি অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও সংশোধিত বাজেট তা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের আট মাসে সরকার ব্যাংক খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার ১৭ শতাংশ ঋণ নিয়েছে।

ব্যাংক খাত থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে তাতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আমাদের মূল নজর দিতে হবে রাজস্ব সংগ্রহে। বিশ্বের সর্বনিম্ন রাজস্ব-জিডিপির হার বলেই অতি জরুরি প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংক খাতের ওপর সরকারকে নির্ভর করতে হচ্ছে। সব বিবেচনায় সরকার প্রাজ্ঞ সিদ্ধান্ত নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।