শেখ আবু তালেব: দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক গত সপ্তাহে পতনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে ব্ল–চিপস ডিএস৩০-এর পতন হয়েছে আগের ধারাবাহিকতায়। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও কমেছে। বড় মূলধনি খাতের মধ্যে ব্যাংক ছাড়া সব খাতেরই পতন হয়েছে সপ্তাহ শেষে।
সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে প্রকৌশল খাতের শেয়ারদর। ডিএসইর সাপ্তাহিক লেনদেন তথ্য পর্যালোচনা করে পাওয়া গেছে এমন তথ্য। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ায় আগের সপ্তাহের চেয়ে এক দশমিক ১৭ শতাংশ কমেছে লেনদেন। গত সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৫৭টি সিকিউরিটিজ লেনদেনে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ৯০টির বা ২৫ শতাংশ, দর কমেছে ২৪৪টির বা ৬৯ শতাংশের, সপ্তাহ শেষে দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির ও লেনদেন হয়নি দুটি সিকিউরিটিজের।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের চেয়ে এক দশমিক শূন্য এক পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সপ্তাহ শেষে সূচক দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৭৭১ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচক পড়েছিল ৩৯ দশমিক ২২ পয়েন্ট। যদিও আগের সপ্তাহের শুরুর দিনে থাকা চার হাজার ৮১০ দশমিক ২২ পয়েন্টে সূচক ফেরেনি এখনও।
সূচক ইতিবাচক ধারায় ফেরাতে ডিএসইর বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। খাতভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ডিএসইর তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের মধ্যে বড় মূলধনি খাতের প্রায় সবগুলোর শেয়ারদর সপ্তাহ শেষে পতন হয়েছে। শুধু ব্যাংক খাত এই পতনের ধারাবাহিতকা থেকে রক্ষা পেয়েছে।
আর্থিক খাতের সিকিউরিটিজের মধ্যে ব্যাংক খাত গেইন করেছে শূন্য দশমিক ৭১ শতাংশ। মিউচুয়াল ফান্ড এই খাতের মধ্যে গত সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি চার দশমিক ৩২ শতাংশ শেয়ারদর পতন হয়েছে। এছাড়া সাধারণ বিমা খাত দুই দশমিক ৪৯ শতাংশ, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) এক দশমিক ৬৬ শতাংশ ও জীবন বিমা খাতের শেয়ারদর কমেছে এক দশমিক ৬৬ শতাংশ।
অপরদিকে আর্থিক খাতের বাইরে থাকা সিকিউরিটিজের মধ্যে মিশ্র প্রবণতায় লেনদেন শেষ হয়। এই খাতের সিকিউরিটিজের মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সবচেয়ে বেশি পাঁচ দশমিক ৭০ শতাংশ গেইনারে ছিল। এছাড়া টেলিকম খাতও দুই দশমিক ৭৯ শতাংশ গেইন করে। কিন্তু প্রকৌশল খাত সবচেয়ে বেশি এক দশমিক ৮৪ শতাংশ, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং ওষুধ খাত শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ লোকসান দেয়।
সাপ্তাহিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইর মোট লেনদেনে সর্বোচ্চ ১৬ শতাংশ অবদান রাখে সাধারণ বিমা খাত। এছাড়া ১২ শতাংশ অবদান রাখে ব্যাংক খাত। এ সময়ে ৯ শতাংশ অবদান রাখে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত, বস্ত্র খাত সাত শতাংশ এবং টেলিকম খাত চার শতাংশ অবদান রাখে। এছাড়া লেনদেনে ওষুধ ও রসায়ন খাত ১২ শতাংশ, জীবন বিমা খাত এক শতাংশ, সিরামিক খাত চার শতাংশ, আইটি খাত এক শতাংশ, মিউচুয়াল ফান্ড খাত তিন শতাংশ, প্রকৌশল খাত ১৫ শতাংশ এবং এনবিএফআই খাত দুই শতাংশ অবদান রাখে।
তথ্য অনুযায়ী, একক কোম্পানি হিসেবে গত সপ্তাহে ডিএসইতে শেয়ারদর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষ দশটির তালিকায় প্রথমে রয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ারদর সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পায় আগের সপ্তাহের চেয়ে।
গত সপ্তাহে সর্বশেষ শেয়ারটি ২৮৮ টাকা ২০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। সপ্তাহজুড়ে শেয়ারটি সর্বমোট ৩৮ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা লেনদেন করে, যা গড়ে প্রতিদিন সাত কোটি ৬৩ লাখ ২৬ হাজার টাকা। শীর্ষ ১০টিতে স্থান পাওয়াদের মধ্যে রয়েছে মালেক স্পিনিং মিলস, আইটি কনসালটেন্টস, পদ্মা অয়েল, ফারইস্ট নিটিং অ্যান্ড ডায়িং ইন্ডাস্ট্রিজ, এ্যাসকোয়ার নিট কম্পোজিট, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, যমুনা অয়েল ও কাসেম ইন্ডাস্ট্রিজ।
অপরদিকে লোকসানের শীর্ষে উঠে এসেছে মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্স। গত সপ্তাহে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ শেয়ারদর কমেছে ৩৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। কোম্পানিটি সর্বশেষ ৯১০ টাকা দরে লেনদেন হয়। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটি সর্বমোট ৩৮ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা লেনদেন করে, যা গড়ে প্রতিদিন সাত কোটি ৭১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।
এছাড়া লোকসানি তালিকায় শীর্ষ ১০টিতে স্থান পায় সাফকো স্পিনিংস মিলস, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, স্ট্যাইল ক্রাফট, কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, ন্যাশনাল টিউবস ও জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস।
এছাড়া এককভাবে লেনদেনের ক্ষেত্রে শীর্ষে উঠে এসেছে ন্যাশনাল টিউবস। কোম্পানিটি গত সপ্তাহে ডিএসইতে ৬০ কোটি ৯৮ লাখ ২৬ হাজার টাকার শেয়ারের লেনদেন করে, ডিএসইর মোট লেনদেনের যা তিন দশমিক ৯৫ শতাংশ।