Print Date & Time : 5 July 2025 Saturday 5:06 pm

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লালীগুড় ছাড়া পিঠা-পুলির স্বাদ ফিকে

প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: প্রতি বছরের মতো এবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে চলছে লালী গুড় উৎপাদনের ধুম। আঁখের রস থেকে তৈরি সুস্বাদু লালী গুড় পিঠা-পুলির সঙ্গে অসাধারণ মেলবন্ধন তৈরি করে। লালীগুড় ছাড়া পিঠা-পুলির স্বাদ যেন অনেকটাই ফিকে, যা রসনা বিলাসীদের জন্য একটি অতুলনীয় অভিজ্ঞতা। বিজয়নগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ১০-১২ জন উদ্যোক্তা বছরের কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করে লালী গুড় উৎপাদনে।

এ মৌসুমে জেলায় প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে আঁখের আবাদ হয়েছে, যার বেশিরভাগই ব্যবহৃত হয় লালী উৎপাদনের জন্য। প্রথমে আঁখ সংগ্রহের পর সনাতন পদ্ধতিতে মহিষ দিয়ে মাড়াই করা হয় এবং রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর মাড়াইকৃত রস বড় পাত্রে ৩-৪ ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু লালী গুড়। উদ্যোক্তা জামাল খান জানান, “প্রতি বছরই আমরা এই লালী তৈরি করি। লালী তৈরির জন্য ৮-১০ কানি জমির প্রয়োজন হয়, যার ফলে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়। ১ কানি জমির আঁখ দিয়ে ১৭-১৮ মন লালী তৈরি হয়। প্রতি লিটার লালী বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়।” তিনি আরো বলেন, “নির্ভেজাল এবং স্বাদে অনন্য হওয়ায় লালী গুড়ের চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশপাশের উপজেলাগুলো থেকে ক্রেতারা এখানে ছুটে আসেন।”

উদ্যোক্তা তাজুল ইসলাম জানান, ‘আখ চাষের এক বছর পর আখের ফলন হয়ে থাকে, এবং তার পরই শুরু হয় লালী তৈরির কাজ। প্রথমে মহিষ দিয়ে আখ মাড়াই করে আঁখের রস বের করা হয়, এবং পরে এই রস ২-৩ ঘণ্টা চুলায় জ্বাল দেওয়ার পর তৈরি হয় লালী গুড়।’
বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ক্রেতারা জানান, ‘বাজার থেকে লালী গুড় কিনলে ভালো পাওয়া যায় না, তবে সনাতন পদ্ধতিতে তৈরি লালী গুড়ের মান অনেক ভালো এবং স্বাস্থ্যসম্মত। শীতকালে পিঠা-পুলির সাথে এর রস দিয়ে খেতে দারুণ সুস্বাদু লাগে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা জানান, ‘চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় দুই কোটি টাকার লালী গুড় কেনাবেচা হবে। লালীর উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সহজ শর্তে ঋণ ও আঁখের নতুন জাত এবং প্রযুক্তি সম্প্রসারণে কাজ করে যাচ্ছে।