হাইকমিশনারকে কাদেরের প্রশ্ন

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কি ভোটের আগে পদত্যাগ করেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী জাতীয় নির্বাচন কীভাবে হবে, এই প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে পাল্টা প্রশ্নের মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ হাই কমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে সেতু ভবনে ওই বৈঠক শেষে সেতুমন্ত্রী কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্রিটিশ হাই কমিশনার সাহেবকে আমি জিজ্ঞেস করেছি, আপনাদের দেশে নির্বাচনটা কীভাবে হয়? সেখানে কি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে, হাউজ অব কমন্স কি ডিজলভ (ভেঙে দেয়া) হয়? কেয়ারটেকার নামে কোনো সরকার কি নির্বাচনের সময় আবির্ভূত হয়?’

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পশ্চিমা বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার নানামুখী তৎপরতার মধ্যে এ বৈঠক হয়। পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশে একটি ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ আয়োজনে জোর দিচ্ছে। তা না হলে দায়ী ও তার স্বজনদের ভিসা না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এর মধ্যে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনের ভোট শেষের আগে আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় ১১টি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিশন প্রধান একজোট হয়ে বিবৃতি দিয়েছেন, যা নিয়ে সরকারের তরফে এসেছি প্রতিক্রিয়া। এই বিবৃতি কূটনৈতিকদের আচরণ বিষয়ে ভিয়েনা কনভেনশনের ‘বিরোধী’ মন্তব্য করে ওই কনভেনশন মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

যুক্তরাজ্যের দূতের সঙ্গে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে বৈঠকের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘সবার আলোচনার বিষয়বস্তু একই। আগামী নির্বাচনটা কীভাবে হবে, সরকারি দল হিসাবে আমাদের ভূমিকা কী হবে, বিরোধী দলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন হবে, নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু কীভাবে হবে।’

বাংলাদেশে কেমন নির্বাচন চান, সেই বক্তব্যে ব্রিটিশ হাইকমিশনার ‘পার্টিসিপেটরি’ বা অংশগ্রহণমূলক শব্দটা যোগ করেছেন বলে জানান ওয়ায়দুল কাদের।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি ও সমমনাদের সরকার পতনের ‘এক দফা’ আন্দোলন ঘোষণার কারণে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচন বিএনপি ও সমমনারা বর্জন করে। ২০১৮ সালে তারা ভোটে এলেও সেই নির্বাচনে ‘আগের রাতে ভোট’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ তোলে পুরোনো দাবিতে ফিরে গেছে এবার।

‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’ নিয়ে বিদেশিদের বক্তব্যেও বিরক্তি প্রকাশ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘তাদের বলা তো তারা বলবেই। নির্বাচনে আসাটা একটি দলের অধিকার। আমি তো কাউকে জোর করে নির্বাচনে নিয়ে আসতে পারব না। যে অংশ নেবে, নেবে। তারা যে শর্ত জুড়ে দিচ্ছে সেটা সংবিধানের বাইরে। আমার স্পষ্ট কথা, আমার দফা একটা। সংবিধানসম্মতভাবে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে।’

নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘উত্তর আমাদের সেটা একটাই, আমেরিকানদের যা বলেছি, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে যা বলেছি, আজকে ব্রিটিশ হাই কমিশনারকেও তাই বলেছি। আমাদের বক্তব্য অভিন্ন। আমাদের মূল বক্তব্য হচ্ছে, প্রত্যেক দেশে গণতন্ত্রের কার্যকারিতা ও নির্বাচন একই রকম। নির্বাচন কমিশন থাকে এবং তারা নির্বাচন পরিচালনা করে, আর সরকার নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালন করবে। তারা কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। তারা শুধু রুটিন কাজ করবে আর নির্বাচন করার জন্য যে যে সহযোগিতা দরকার সেটা দেবে।’

বিএনপির তত্ত্ববধায়ক সরকারের দাবিকে ‘অদ্ভুত, উদ্ভট ও অযৌক্তিক’ হিসেবে বর্ণনা করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘আসলে বিএনপি তাদের নির্বাচিত হওয়ার গ্যারান্টি দিতে পারে, এমন ব্যবস্থার নিশ্চয়তা ছাড়া ইলেকশন করবে না। এটা তাদের পণ। তারা সংবিধান মেনে নির্বাচন করুক। ভয় কীসের, হেরে যাওয়ার?’

আলোচনায় সরকার পতনের দাবিতে বিএনপির পদযাত্রায় বিভিন্ন জেলায় সংঘাতের বিষয়টি নিয়েও কথা হয় বলে জানান ওবায়দুল কাদের।

নির্বাচন ঘিরে বিদেশি কূটনীতিকরা নানামুখী তৎপরতা চালালেও বিএনপির দাবিগুলোর বিষয়ে বিদেশিদের ‘কোনো বক্তব্য নেই’ বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপির দাবির সমর্থনে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বা অন্য কোনো বিদেশি প্রতিনিধি কথা বলেছে কি না জানতে চাইলে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি যে দাবি করছে এ ব্যাপারে বিদেশিদের কোনো বক্তব্য নেই। আমেরিকান অ্যাম্বাসেডার নিজে বলেছেন, ‘তোমরা কোন কেয়ার করবা, কোন টেককেয়ার করবা, উই ডোন্ট কেয়ার অ্যাবাউট ইট। কেয়ারটেকারের বিষয়ে বিএনপির মাথাব্যথা আছে। তাহলে বিএনপির দাবির সঙ্গে বিদেশিদের দাবির মিল কোথায়?’

কাদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়েও বিদেশিরা বলে না। বিএনপির মূল দাবি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ। তাদের এই এক দফা সম্পর্কে তো বিদেশিরা আমাদের বলেনি। বিদেশিরা তো বলেনি যে, বিএনপির এক দফা মেনে নেয়া দরকার। আমরা কীভাবে ইলেকশন করতে চাই, বিদেশিরা সেটা জানতে চেয়েছে। বিরোধী দলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন সেটা বিদেশিরা জানতে চেয়েছে।’