শেয়ার বিজ ডেস্ক : ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে গতকাল থেকে আগামীকাল রোববার পর্যন্ত বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে সরকার। এ তিন দিন পর্যন্ত বাংলাদেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোয় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং তার বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গতকাল এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানায়। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের বালমোরা ক্যাসেলে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। খবর: বাসস।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এমপিকে লেখা এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের আকস্মিক মৃত্যুতে আমি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে এবং আমার পক্ষ থেকে আপনাকে গভীর শোক ও দুঃখ জানাচ্ছি এবং আপনার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের জনগণের প্রতি আমাদের আন্তরিক সমবেদনা ও সহানুভূতি জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের গতকাল জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা ও প্রার্থনা শোকাহত রাজপরিবারের সদস্য এবং যুক্তরাজ্যের শোকাহত জনগণের সঙ্গে রয়েছে এবং আমরা মহামান্য রানির বিদেহী আত্মার চিরশান্তি ও পরিত্রাণের জন্য প্রার্থনা করছি।’
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, রানি শুধু ২৫০ কোটি কমনওয়েলথ জনগণের স্তম্ভ এবং শক্তি ছিলেন না, বরং তিনি করুণা, মর্যাদা, প্রজ্ঞা ও সেবারও প্রতীক ছিলেন।
তিনি লিখেছেন, ‘বিশ্বের সমসাময়িক ইতিহাসে সবচেয়ে কিংবদন্তি এবং দীর্ঘতম রাজত্বকারী রাজা হিসেবে তিনি কর্তব্য, সেবা ও ত্যাগের সর্বোচ্চ মান স্থাপন করেছেন এবং বিশ্বজুড়ে তার অগণিত মানুষের কাছে উৎসর্গের একটি অতুলনীয় উত্তরাধিকার রেখে গেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, রানি তার দেশের নাগরিকদের জন্য অনুপ্রেরণা, সাহস ও শক্তির একটি দুর্দান্ত উৎস হয়ে থাকবেন। বাঙালি জনগণের বাড়িতে তার দুটি ঐতিহাসিক রাজকীয় সফরের জন্য অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘যুক্তরাজ্যে মহামান্য রানি এবং আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি এবং অটোয়া ও কিংস্টনে দুটি কমনওয়েলথ সরকারপ্রধানের বৈঠক চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ ‘আমি লন্ডনে ২০১৮ সিএইচওজি-এ আমাদের শেষ ব্যক্তিগত আলাপচারিতার প্রশংসা করি,’ তিনি স্মরণ করে বলেন।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে রানি সবচেয়ে আবেগপূর্ণ বার্তা দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমরা বন্ধুত্ব ও সম্পর্কের বন্ধন ধারণ করি, যা আমাদের অংশীদারিত্বের ভিত্তি হিসেবে রয়ে গেছে এবং ৫০ বছর আগের মতো আজও তা গুরুত্বপূর্ণ।’
‘দুটি কমনওয়েলথ দেশের মধ্যে সম্পর্ককে পুষ্ট করার মাধ্যমে এটিকে বারবার হƒদয় থেকে হƒদয়ে নিয়ে যাওয়া হবে,’ তিনি যোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার দুঃখজনক মৃত্যুতে বাংলাদেশের মানুষ এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে শুধু একজন বিশ্বস্ত বন্ধুকেই হারালাম না, একজন প্রকৃত অভিভাবককেও হারিয়েছি।’
শেখ হাসিনা এই অপূরণীয় ক্ষতি সহ্য করার জন্য রাজপরিবারের সদস্য, যুক্তরাজ্যের জনগণ এবং কমনওয়েলথের সদস্যদের সাহস ও দৃঢ়তা দান করার জন্য প্রার্থনা করেন।
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘসময় সিংহাসনে থাকা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি এম আবদুল হামিদ।
তার উত্তরসূরি রাজা চার্লসের কাছে পাঠানো শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, গভীরতম দুঃখের সঙ্গে এবং ভারাক্রান্ত হƒদয়ে আমি বিশ্বে দীর্ঘতম সময় সিংহাসনে থাকা মহামান্য রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।”
বিশ্বে তার অবদানের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রপতি হামিদ বলেন, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে যুক্তরাজ্যের জনগণ এবং কমনওয়েলথ ও অন্যান্য রাজ্যের জনগণের প্রতি তার সাত দশকের সেবা, কর্তব্য ও নিষ্ঠার জন্য সর্বদা স্মরণ ও শ্রদ্ধা করা হবে।