ব্লগার অনন্ত হত্যার আসামি ফয়সাল ব্যাঙ্গালুরু থেকে গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটে লেখক ও ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি ফয়সাল আহমদ ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। গত ১ জুলাই ব্যাঙ্গালুরুর বোম্মনাহাল্টিতে তিনি গ্রেপ্তার হন। ৩ জুলাই তাকে কলকাতায় নেয়া হয়।
আজ বুধবার কলকাতা পুলিশের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।
চলতি বছরের জুনে ফয়সালের ভারতে অবস্থানের তথ্য পান বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। এরপর কলকাতা পুলিশকে তার মোবাইল নম্বর দেয়া হয়। ওই নম্বর ট্র্যাকিং করেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে ভারতের মাটিতে ফয়সালের জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের তথ্য মিলেছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাকে এবার বাংলাদেশ পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হবে।
এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেছে, ব্লগার হত্যাকা-ের সময়ে ফয়সাল ছিলেন মেডিকেলের ছাত্র। জড়িয়ে পড়েছিলেন আল-কায়দার ছায়া সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সঙ্গে। বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়ানোর আড়ালে জেহাদি মতাদর্শ ছড়িয়েছেন ফয়সাল।
বাংলাদেশে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এখন কোনো কার্যক্রম নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এর আগে এ তথ্য জানিয়েছেন। তবে ভারতের আসামে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সক্রিয় হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতে চিন্তায় ভারতের পুলিশ।
ফয়সালের কাছে যে পাসপোর্ট মিলেছে, সেখানে রয়েছে কাছাড়-ঘেঁষা মিজোরামের ঠিকানা। তিনি ড্রাইভিং লাইসেন্স জোগাড় করেন ব্যাঙ্গালুরু থেকে। ভোটার কার্ড শিলচরের। সেখানে তার পরিচয় শাহিদ মজুমদার।
কলকাতা পুলিশ জানায়, জেহাদি কার্যকলাপের অভিযোগ স্বীকার করে ফয়সাল জানিয়েছেন, ২০১৫ সালেই তিনি শিলচরে পালিয়ে যান বাংলাদেশ থেকে। তবে ব্লগার হত্যায় জড়িত থাকার কথা তিনি স্বীকার করেননি। তার দাবি, তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত এই জঙ্গি বলেন, তার নেতৃত্বেই আসামের বরাক উপত্যকায় আল-কায়েদা ঘাঁটি মজবুত হয়েছে। তিনি আল-কায়েদার ছায়া সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন মাদ্রাসায় পড়ানোর আড়ালে ‘জেহাদি মতাদর্শ’ ছড়িয়েছেন ফয়সাল।
গত ৩০ মার্চ সিলেটের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালে অনন্ত বিজয় হত্যা মামলার রায়ে ফয়সালসহ চারজনকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়। মৃত্যুদ-প্রাপ্তরা হলেন কানাইঘাট উপজেলার আবুল হোসেন, খালপাড় তালবাড়ির ফয়সাল আহমদ, সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বিরেন্দ্রনগরের (বাগলী) মামুনুর রশীদ ওরফে হারুন অর রশিদ ও কানাইঘাটের ফালজুর গ্রামের আবুল খায়ের রশীদ আহমদ। তাদের মধ্যে আবুল হোসেন, ফয়সাল আহমদ ও মামুনুর রশীদ পলাতক ছিলেন।
এছাড়া, সিলেট নগরের রিকাবীবাজার এলাকায় বসবাসকারী সাফিউর রহমান ওরফে ফারাবী সাফিউর রহমানকে খালাস দেয়া হয়।
২০১৫ সালের ১২ মে সিলেট নগরের সুবিদবাজারে নুরানি আবাসিক এলাকার নিজ বাসার সামনে খুন হন অনন্ত। পেশায় ব্যাংকার অনন্ত বিজ্ঞান ও বিবর্তন নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি ‘যুক্তি’ নামে বিজ্ঞানবিষয়ক একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন। এছাড়া বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
হত্যার পর অনন্তের বড় ভাই রতেœশ্বর দাশ সিলেট বিমানবন্দর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখালেখির কারণে অনন্তকে ‘উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী’ পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে বলে অভিযোগ করা হয়।
মামলাটি পুলিশের কাছ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। সিআইডির পরিদর্শক আরমান আলী তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৯ মে সম্পূরক অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন। এতে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক ১০ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করে ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়। মামলায় ২৯ সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।