ব ্য ি ক্ত  উ ে দ ্য া গ: শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও কৃষি জাদুঘর

ঘুকরা, টুনা, জাঁতা, নিড়ানি, কাস্তে, হতুড়ি, গাঁইতি, শিকপাই, দড়ি পাকানোর ঢ্যারা, ঢেঁকি, লাঙ্গল, জোয়াল, গরুর গাড়ির চাকা ও ছই, আমপাড়ার জালি ও ঠুসি, সেচ দেওয়ার জোত, মাছ ধরার চাঁই, ইঁদুর মারার নানা রকমের ফাঁদ প্রভৃতি কৃষিকাজের উপকরণ রয়েছে তার জাদুঘরে। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলার বিভিন্ন মডেলের মাথাল, কৃষি পঞ্জিকাসহ বিভিন্ন ঢঙের কৃষি উপকরণে ঠাসা জাদুঘরটি। আরও রয়েছে কৃষকের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও চাষবাস বিষয়ে দুর্লভ অনেক বই ও ম্যাগাজিন। শুধু কী তা-ই, প্রশাসন ও চিকিৎসাবিষয়ক প্রয়োজনীয় ফোন নাম্বার রয়েছে এখানে।

জাদুঘরটি নওগাঁর মান্দা উপজেলার কালিগ্রামের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম শাহের। তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সহকারী শিক্ষক। তার জাদুঘরের কৃষি পঞ্জিকাটির উদ্ভাবক তিনিই।

ছোটবেলা থেকে কৃষির প্রতি জাহাঙ্গীর আলমের ঝোঁক ছিল। কৃষিবিষয়ক উপকরণ ও বই-পুস্তক সংগ্রহ করতেন। এভাবে প্রায় ২০ বছর জাদুঘরের পেছনে সময় দিয়েছেন। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন এটি। নতুন নতুন যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনের ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে কৃষিকাজের পুরোনো উপকরণ। এসব উপকরণকে সবার কাছে পরিচিত করে তোলার চেষ্টা করছেন তিনি।

তার বাড়ির চারপাশ গাছে ঘেরা। বাড়িটি মাটির তৈরি। এ বাড়ির চারপাশ, আঙিনা সবই চমৎকার, দেখতে সুন্দর। আঙিনায় প্রায় ৫০ প্রজাতির ফলগাছ ও ১২০ প্রজাতির ঔষধি গাছ রয়েছে। আঙিনার সঙ্গে থাকা পুকুরটিতে মাছ চাষ করেছেন। বর্তমানে তার বাড়িতে নয়টি ঘর রয়েছে। ঘরগুলোকে জাদুঘর, গ্রন্থাগার, খাবারঘর, গোলাঘর প্রভৃতিতে রূপ দিয়েছেন তিনি। এখানে অতিথিদের জন্য শোয়ারঘরও রয়েছে। বাড়িটিই তার জাদুঘর। নাম দিয়েছেন শাহ কৃষি তথ্য পাঠাগার ও কৃষি জাদুঘর। এর দেখভাল করেন দুজন কর্মী।

জাদুঘরের ভেতরে বসে পড়ার জন্য রয়েছে চেয়ার, চৌকি ও মোড়া। প্রতিষ্ঠাতা জাহাঙ্গীর প্রজেক্টরের মাধ্যমে এখানে বসে কৃষকদের উপকারী পোকা চিনিয়ে থাকেন। কৃষিতে ভূমিকা রাখার জন্য ২০১১ সালে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল থেকে এক লাখ টাকা পুরস্কার পেয়েছিলেন। এর সঙ্গে আরও কিছু টাকা যোগ করে প্রজেক্টরটি কেনেন। কৃষিসংক্রান্ত নানা তথ্য উপস্থাপন করেন। এখানেই থেমে নেই তার কার্যক্রম। প্রতিদিন সকালে শিশুদের পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য কাজ করেন। এ ছাড়া প্রতি সন্ধ্যায় নিরক্ষর কৃষকদের জন্য স্বাক্ষরতা অভিযান চালান তিনি। বীজ উৎপাদন কৌশল, মৎস্য চাষে করণীয়, বীজ বিতরণ, ভেজাল সার চেনার উপায়, মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে কৃষকের ভূমিকা ও পরিবেশ নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করেন তিনি। কৃষকের সুবিধার জন্য বিনামূল্যে পশু চিকিৎসাও করা হয় এখানে। প্রাণীর জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। ব্যক্তি উদ্যোগে কৃষকদের নিয়মিত ফ্রি চিকিৎসাসেবা ও হার্ট, কিডনি, চক্ষু ক্যাম্প করা হয় এখানে। কৃষকদের রক্তের প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা করেন। বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ফসলের মাঠ নিয়ে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। এ ছাড়া জাদুঘরের পক্ষ থেকে কলেজ পর্যায়ে বই বিতরণ করা হয়।

কৃষিকাজে ভূমিকা রাখার জন্য জাতীয় কৃষি দিবসে ভালো কৃষক, ভালো শ্রমিক, ভালো বীজতলা প্রস্তুতকারক প্রভৃতি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দিয়ে থাকে জাদুঘরটি।

দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক কৃষক ও কৃষি উদ্যোক্তা এ জাদুঘর দেখতে এসেছেন। দেশের বাইরে থেকেও অনেক নামকরা শিক্ষক, গবেষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞরা এসেছেন এখানে। এখানে গবেষণার কাজে আসেন অনেক শিক্ষার্থী।

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে জাদুঘরটি।