২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ঋণ বিতরণ ও খেলাপি ঋণ’ সম্পর্কিত সবশেষ প্রতিবেদন বলছে, কমিউনিটি ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের কারণে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে সর্বনিম্ন। বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে কমিউনিটি ব্যাংক বদ্ধপরিকর।
যেখানে ব্যাংক খাতের একটি বড় সমস্যা হলো, উচ্চ খেলাপি ঋণ ও মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে খেলাপি ঋণকে প্রতিহত করে কমউিনিটি ব্যাংক একটি অনন্য নজির স্থাপন করেছে। বলা যায়, খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর ভিত্তি দুর্বল করে। খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংক খাতে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই ঝুঁকি তৈরি করে। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপির প্রভাব পড়ে ঋণ ব্যবস্থাপনায়। ফলে এগোতে পারেন না ভালো উদ্যোক্তারা। পরিণামে বাড়ে না বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। কাজেই খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি কাজ, যা ওই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। ঠিক সেই কাজটি করেছে বলেই কমিউনিটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছর পরে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, সগৌরবে আর্থিক সুশাসনের নজির স্থাপন করেছে ‘আস্থা, নিরাপত্তা, প্রগতি’ কমিউনিটি ব্যাংকের মূল ভিত্তি। সেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে, ব্যাংকিং সেবার আওতার বাইরে থাকা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে অত্যাধুনিক, নিরাপদ ও আস্থাশীল আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কমিউনিটি ব্যাংক সেবা পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। সেই ধারায় সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করেছে পাঁচ বছর। বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দেশের নতুন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে।
গত পাঁচ বছরে কমিউনিটি ব্যাংক দেশের ১৮টি শাখা, দুটি উপশাখা ও ৬৪টি জেলায় সার্ভিস পয়েন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের দুই লাখেরও বেশি সদস্যের বেতন-ভাতাসহ তাদের সার্বিক আর্থিক সেবা দিয়ে আসছে। এটিএম বুথের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন ও কমিউনিটি ক্যাশ অ্যাপসের মাধ্যমে প্রত্যেকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে সব রকমের সেবা। এছাড়া এই ১৮টি শাখা ও দুটি উপশাখার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন কমিউনিটির আপামর জনতার বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের পাশাপাশি কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে চলেছে কমিউনিটি ব্যাংক।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের আমানত এবং ঋণ ও অগ্রিম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকের সকল ব্যয় নির্বাহ করার পরেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ব্যাংক মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে। ব্যাংকের বিজ্ঞ পরিচালনা পর্ষদের মেধা, প্রজ্ঞা ও দক্ষতা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষ কর্মতৎপরতার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। পূর্ববর্তী বছরের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয়বারের মতো ব্যাংক ২০২৩ সালে সম্মানিত শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে ১০ শতাংশেরও বেশি। এত অল্প সময়ে এই সাফল্য বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল মাইলফলক।
বাংলাদেশ পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে এ ব্যাংকটি গঠিত হলেও পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ জনগণও যাতে তাদের কাক্সিক্ষত সেবা পায়, সেটি নিশ্চিতকরণে ব্যাংকটি বদ্ধপরিকর। এ কারণে কমিউনিটি ব্যাংক শুধু পুলিশের ব্যাংক নয়, কমিউনিটি ব্যাংক সাধারণ জনগণের ব্যাংক। সেবার আধুনিকীকরণ করে কীভাবে গ্রাহকরা লোনসহ দৈনন্দিত ব্যাংকিং কার্যক্রমগুলো সাবলীলভাবে সম্পাদন করতে পারে, সেদিকে আরও দূরদৃষ্টির অংশ হিসেবে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা ও অনলাইনভিত্তিক সেবার দিকে গুরুত্ব বাড়ানো হয়েছে। কমিউনিটিভিত্তিক প্রত্যেক শ্রেণি-পেশার মানুষকে সামনে রেখে উদ্ভাবনী ও যুগোপযোগী স্মার্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে কমিউনিটি ব্যাংক তার উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই স্বীকৃতি হিসেবে ডিজিটাল উদ্ভাবনী সেবা ও উৎকর্ষের জন্য পরপর পাঁচ বছর আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, ইমার্জিং ক্রেডিট কর্তৃক ক্রেডিট রেটিংয়ে ব্যাংকের স্বল্পমেয়াদি রেটিং ২ ও দীর্ঘমেয়াদিতে এএ-। আর্থিক নিরীক্ষা ও সুশাসনের ওপর ভিত্তি করে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় বলেই ঈর্ষণীয় এই সফলতা আনা সম্ভব হয়েছে।