ভারতের লোকসভা নির্বাচন

ভাগ্য নির্ধারণ হবে ছয়টি রাজনৈতিক দলের

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক চর্চা হিসেবে ধরা হয় ভারতের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানকে। গতকাল শুরু হয়েছে সাত দফার অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট গ্রহণ। এবারের নির্বাচনে যোগ্য ভোটার প্রায় ১০০ কোটি। বিশ্বের জনবহুলতম দেশ ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ সংসদ সদস্য বাছাই করবেন ভোটাররা। ছয় সপ্তাহ ধরে চলা সাত দফার এ ভোট গ্রহণ শেষ হবে আগামী ১ জুন। ফলাফল জানা যাবে ৪ জুন। নির্বাচনে ভাগ্য নির্ধারিত হবে ছয়টি পরিচিত জাতীয় দলের কয়েক হাজার প্রার্থীর। দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বিজেপি, কংগ্রেস, দিল্লির শাসক দল আম আদমি পার্টি ও কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্ক্সবাদী)। এ ছাড়া আছে রাজ্যপর্যায়ে সুপরিচিত ৫৮টির মতো দল। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অনেক ছোট দলের প্রার্থীরাও। খবর: রয়টার্স ও বিবিসি।

বিজেপি: বিশ্বের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিজেপির সদস্যসংখ্যা ১৮ কোটির কাছাকাছি। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নরেন্দ্র মোদির অধীন প্রথম সরকার গঠন করে ২০১৪ সালে। এর পর থেকে বেশ শক্তপোক্তভাবেই ক্ষমতায় টিকে আছে দলটি। মোদির হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডাগুলো সফলভাবে এগিয়ে নিতে তাকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা দিয়ে আসছেন অমিত শাহ। যেমন মুসলিম জনসংখ্যা-অধ্যুষিত রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়া, বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করা প্রভৃতি। সমালোচকেরা বলছেন, এ আইনে বৈষম্যের শিকার হবেন দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম জনগণ।

কংগ্রেস: ভারতের সবচেয়ে পুরোনো দল কংগ্রেস। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সময় ধরে দেশটি শাসন করেছে তারা। তবে দুই দশক ধরে মোদির শাসনামলে রাজনীতিতে রীতিমতো টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমেছে দলটি। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী মোদির সর্বাধিক ঘোরবিরোধী। দলটির তারকা প্রচারক রাহুল। তিনি কখনও কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের মন্ত্রী হননি।

রাহুল (৫৩) চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ২৬ সদস্যের বিরোধীদলীয় জোট ধরে রাখতে ও জোটের প্রতি জনসমর্থন তৈরিতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে ও বিভিন্ন ইস্যুতে দেশজুড়ে দুটি বড় পদযাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছেন কংগ্রেসের এই কাণ্ডারি। এবারের নির্বাচনে রাহুল দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার ওয়ানাড আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নেহরু-গান্ধী পরিবারের বর্তমান মাতৃপ্রধান সোনিয়া গান্ধী এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আম আদমি পার্টি: ভারতের রাজনীতিতে আম আদমি (এএপি) বা কমন পারসনস পার্টির উদ্ভব ২০১১ সালে দুর্নীতিবিরোধী এক শক্তিশালী আন্দোলন থেকে। ঘনিষ্ঠ সহযোগী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সমর্থনে ওই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন আন্না হাজারে।

পরে ২০১২ সালে এএপি গঠন করেন কেজরিওয়াল। ২০১৫ সালে রাজধানী দিল্লিতে স্থানীয় সরকার গঠন করে তার দল। এতে রাজনীতিতে এক নজিরবিহীন ধাক্কার শিকার হয় বিজেপি ও কংগ্রেসের মতো বড় দলগুলো। তখন থেকেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল মোদির কট্টর সমালোচক হয়ে উঠেছেন। চলতি সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের মিত্র হিসেবে রয়েছে এএপি। কথিত এক ঘুষ কেলেঙ্কারিকে ঘিরে এখন কেজরিওয়াল ও তার দলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। এতে নির্বাচনে দলটির ভালো ফলাফলের সম্ভাবনায় অনিশ্চয়তার ছায়া পড়েছে।

দ্রাবিড় মুনেত্র কাজগম (ডিএমকে): দক্ষিণ ভারতের একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি দ্রাবিড় মুনেত্র কাজগম (ডিএমকে)। সংসদের নিম্নকক্ষে আসনসংখ্যার দিক থেকে দেশটির তৃতীয় বড় দল এটি। কংগ্রেসের মিত্র এ দলটি তামিলনাড়ু রাজ্যে ক্ষমতাসীন।

অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: সংসদে আসনসংখ্যার দিক থেকে ভারতের চতুর্থ বড় দল তৃণমূল কংগ্রেস। পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে দলটি ক্ষমতায়। প্রায় ২৫ বছর আগে কংগ্রেস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গঠিত হয় দলটি। তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা মমতা ১৩ বছরের কাছাকাছি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন। নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থীদের একজন মহুয়া মৈত্র। প্রধানমন্ত্রী মোদির একজন বিরামহীন সমালোচক তিনি।  সাবেক ব্যাংকার মহুয়াকে ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছর সংসদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তৃণমূলের এ নেত্রী ঘুষ নেয়ার ওই অভিযোগকে অতিরঞ্জিত বলে দাবি করেছেন।