বাংলাদেশ ভারতীয় চোরাই পণ্যের বাজার হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শাড়ি, থান কাপড়, লেহেঙ্গা, পাঞ্জাবি ও তৈরি পোশাক স্থল, নৌ ও আকাশ—এই তিন পথেই আসে এসব পণ্য। কখনও পাথরভর্তি ট্রাক, কখনও কুরিয়ার সার্ভিস, আবার কখনও বিপণিবিতানের কর্মীদের মাধ্যমে এসব পণ্য দেশে আসছে। আবার কখনও ভারতীয় চোরাকারবারিরা সীমান্ত পার করে দিলেই বাংলাদেশি চোরাকারবারিরা তা বিভিন্ন উপায়ে নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন বিপণিবিতানে পৌঁছে দিচ্ছে। আর পণ্যের দাম হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে চলে যাচ্ছে।
চোরাই পথে আসা ভারতীয় এসব পণ্য থেকে একদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে দেশীয় কোম্পানিগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের অনুসন্ধানে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য ওঠে এসেছে। এ নিয়ে ১৬ মার্চ শেয়ার বিজে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি অনেকেই নজরে আসার কথা। এতে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর ভারত থেকে চোরাই পথে বাংলাদেশে প্রায় ৪৫০ কোটি ডলারের থান কাপড়, শাড়ি, লেহেঙ্গা, পাঞ্জাবি ও তৈরি পোশাক প্রবেশ করে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
গোয়েন্দা অনুসন্ধান অনুযায়ী, ভারতের আহমেদাবাদ ও কলকাতা—এই দুই জায়গা হতে স্থল, নৌ ও আকাশপথে বাংলাদেশে চোরাচালান ও রাজস্ব ফাঁকি দেয়া পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। স্থলপথে আহমেদাবাদ হতে প্রথমে করিমগঞ্জ ও আগারতলা চোরাইপণ্য আসে। এই দুই জায়গা হতে কিছু পণ্য নৌপথে আবার বেশির ভাগ পণ্য স্থলপথে সিলেট, ফেনী, ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
কলকাতা হতে সরাসরি বেনাপোল, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরার স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দেশে প্রবেশ করে দেশের বিভিন্ন জেলার বিপণি বিতানে চলে যায়। আবার কলকাতা হতে আকাশ পথে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে চোরাই পণ্য দেশে প্রবেশ করে, যা দেশের বিভিন্ন জেলার নামিদামি বিপণিবিতানে চলে যায়।
চোরাচালানের ক্ষেত্রে প্রধানত বাহক বা এজেন্টদের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতীয় তৈরি পোশাক সামীন্ত এলাকাগুলো দিয়ে প্রবেশ করেন। তবে নৌপথে আনা হয় ট্রলারের মাধ্যমে। আবার চাহিদা ও দাম বেশি হলে সেক্ষেত্রে বিমানপথে আনা হয়। এক্ষেত্রে উড়োজাহাজে শাড়ি আনা হয়। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ভারতের কলকাতা বা অন্যান্য এলাকায় গিয়ে শাড়ির নকশা পছন্দ করে আসেন। এরপর চালান প্রস্তুত হলে প্রক্রিয়াটিতে যুক্ত হন মধ্যবর্তী এজেন্টরা। তারাই সীমান্ত দিয়ে শাড়ি পরিবহন করে বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু গন্তব্যে পৌঁছে দেন।
এসব চোরাচালান বন্ধ করতে পারলে একদিকে দেশের ভেতরে থাকা ছোট পোশাক কারখানাগুলোর ব্যবসা বাড়বে। এতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে। আর অবৈধপথে আসা বন্ধ করতে পারলে শুল্ক দিয়ে ভারতের পোশাক এলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। পাশাপাশি হুন্ডির ব্যবহার বন্ধের ফলে বৈদেশিক মুদ্রার পাচার বন্ধ হবে। তাই দেশের সার্বিক অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে ভারতের পোশাকের চোরাচালান বন্ধে জোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।