ইসমাইল আলী: তৃতীয় এলওসির আওতায় ১৭ প্রকল্পে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেবে ভারত। এর আগে আরও দুই এলওসিতে ২৮৬ কোটি ডলারের বেশি ঋণ চুক্তি হয়েছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশকে ৭৩৬ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার কথা ভারতের। তবে প্রকল্পগুলোর বিভিন্ন শর্ত নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। এজন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় এলওসি থেকে কয়েকটি প্রকল্প প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে।
সম্প্রতি এলওসির পর্যালোচনা বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে তৃতীয় এলওসি থেকে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এছাড়া দ্বিতীয় এলওসি থেকে স্বাস্থ্য খাতে তিনটি ও শিক্ষা খাতের একটি প্রকল্প প্রত্যাহারের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
একাধিক সূত্র জানায়, এলওসি থেকে প্রকল্প প্রত্যাহারের প্রস্তাবে কিছুটা ক্ষুব্ধ হন বৈঠকে সভাপতিত্বকারী প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। তিনি বলেন, সরকারি তহবিল বা অন্য কোনো সংস্থার ঋণের বিকল্প নয় এলওসি। তাই এ অর্থ অন্য কোনো প্রকল্প বা খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবহার করতে হবে।
বৈঠকে আরও বলা হয়, এলওসির আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব প্রেরণের আগেই অর্থায়নের উৎস সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে অনুরোধ করা হয়। তারা প্রকল্পের জন্য এলওসি নাকি সরকারি তহবিল থেকে অর্থ চায় তা নিশ্চিত করতে বলা হয়। এছাড়া যদি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এলওসির অর্থ ব্যবহার করতে না চায় তা ইআরডিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হবে।
প্রসঙ্গত, ভারতের ঋণে ১৭টি প্রকল্প প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে বুড়িগঙ্গা নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পটি প্রস্তাব করেছিল পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় এলওসিতে ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ছিল। এর মধ্যে বিভিন্ন জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা, চারটি মেডিক্যাল কলেজ এবং একটি বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট স্থাপন, রাঙামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন এবং ক্যানসার চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারণ প্রকল্প চারটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়।
এদিকে তৃতীয় এলওসিতে প্রকল্পগুলো অর্থায়নে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী গত এপ্রিলে এমওইউ সই করেন। এতে বলা হয়েছে, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারত সরকার আগেও সহায়তা করেছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে আগের ভারতের রাষ্ট্রীয় ঋণ বা এলওসির অবদান বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে তৃতীয় এলওসি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নকে বিবেচনায় রেখে এক্ষেত্রে নি¤েœাক্ত শর্তে এলওসি সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
শর্তগুলো হলোÑ তৃতীয় এলওসির পরিমাণ হবে সাড়ে চার বিলিয়ন (৪৫০ কোটি) ডলার। এক্ষেত্রে সুদের হার ও ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে আগের ঋণের অনুরূপ। আর তৃতীয় এলওসির আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নকালও আগের মতোই রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এ ঋণের সুদহার হবে এক শতাংশ। পাঁচ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট ফি দিতে হবে বাংলাদেশকে। ঋণের আওতায় ৭৫ শতাংশ পরামর্শক ফি ও ৬৫ শতাংশ পণ্য ভারত থেকে আমদানি করতে হবে। এছাড়া ক্রয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে ৪৮ মাসের মধ্যে। আর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে সর্বোচ্চ ৭২ মাসে। দ্বিতীয় এলওসিতেও ঋণের একই শর্ত ছিল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৭২ মাসে নির্মাণ প্রকল্প শেষ করা অনেক কঠিন। আর যদি সম্ভাব্যতা যাচাইসহ হয় তাহলে এ সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন অসম্ভব। ৯৬ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রথম এলওসির কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এছাড়া প্রকল্প অনুমোদন, দরপত্র চূড়ান্ত ও অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনেক সময় নেয় ভারতের এক্সিম ব্যাংক। এজন্য এলওসি নিয়ে অনেক মন্ত্রণালয়ের আগ্রহ কমছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রথম এলওসির ১০০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছিল ভারত। এর মধ্যে ২০ কোটি ডলার পদ্মা সেতু প্রকল্পে অনুদান হিসেবে মঞ্জুর করে দেশটি। তবে বাকি অর্থে ১৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাচ্ছিল না। এতে আরও ছয় কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ দেওয়া হয়। প্রথম এলওসির ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের আওতায় আটটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও ঝুলে আছে সাতটি। এগুলোর মেয়াদ এরই মধ্যে কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। এদিকে ২০১৫ সালের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরে আরও ২০০ কোটি ডলার ঋণ চুক্তি হয়। তবে দ্বিতীয় এলওসির আওতায় ১৪টির প্রকল্প চিহ্নিত হলেও কোনো প্রকল্পই বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। আর তৃতীয় এলওসির জন্য গত এপ্রিলে এমওইউ সই হলেও এখনও ঋণ চুক্তি সই হয়নি।