Print Date & Time : 21 July 2025 Monday 5:06 am

ভারতের জনসংখ্যাপঞ্জি ব্যবস্থা বিভ্রান্তিকর: অমর্ত্য সেন

শেয়ার বিজ ডেস্ক : ভারতের জাতীয় জনসংখ্যাপঞ্জি (এনপিআর) ব্যবস্থা বৈষম্যমূলক, অসাংবিধানিক, অমানবিক ও বিভ্রান্তিকর বলে অভিহিত করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ও দার্শনিক অমর্ত্য সেন। সংশোধিত নাগরিক আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) ইস্যুতে ভারত যখন উত্তপ্ত, তখন মুখ খুললেন তিনি। গত বুধবার সন্ধ্যায় কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি হলে প্রতীচী ইনস্টিটিউট ও এশিয়াটিক সোসাইটির একটি যৌথ গবেষণাপত্র অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেন এসব কথা বলেন। খবর: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

এনপিআর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটিকে আমি একটি বিভ্রান্তিমূলক ধারনা মনে করি। ভারতের সংবিধানের সঙ্গে এটি সাংঘর্ষিক। সংবিধানে বলা আছে, কোনো সম্প্রদায়ের প্রতিই বৈষম্য করা যাবে না। এটি বৈষম্যমূলক, অসাংবিধানিক ও অমানবিক।’

এনপিআরের কারণে আদিবাসীদের নাগরিকত্বের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না, জানতে চাইলে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আদিবাসী কিংবা অ-আদিবাসী সবার নাগরিকত্বের অধিকারই এটি ক্ষুন্ন করবে। এ সময়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমার নিজেরই তো কোনো বৈধ জন্ম সনদ নেই। আমার বাবা-মায়েরও কোনো জন্ম সনদ ছিল না।’

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ তার সমীক্ষা রিপোর্ট উল্লেখ করে বলেন, আজও সাত শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিশুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য সাত কিলোমিটারের বেশি পথ হাঁটতে হয়, যদিও ২০০৯ সালের শিক্ষা অধিকার আইন অনুযায়ী শিশুর বাড়ির এক কিলোমিটারের মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকার কথা রয়েছে। ৬৮ শতাংশ শিশুর টিকাকরণের কার্ড থাকলেও টিকাকরণ হয়েছে ৫৮ শতাংশ শিশুর। ৪৪ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিসত্তা পরিবারের শৌচাগার নেই। আর পাঁচ শতাংশ শৌচাগার থাকলেও তা ব্যবহারযোগ্য নয়।

বিভিন্ন জনজাতির মধ্যে পার্থক্যের কথা উল্লেখ করে অমর্ত্য সেন বলেন, পশ্চিমবঙ্গে লোধাদের ৫১ শতাংশের বাড়িতে শৌচাগার নেই। তাদের ২৬ শতাংশ শিশু প্রাথমিক স্তরেই পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। অরণ্যের অধিকার, শিক্ষার অধিকার এবং ১০০ দিনের কাজের মতো প্রকল্পের সুফলও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। তাদের বঞ্চিত করে রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

অমর্ত্য সেন বলেন, ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ নিয়ে সমাজের একটি বৃহৎ অংশের নানা ভুল ধারণা রয়েছে। সেই ধারণা বদলাতে হবে। তিনি আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ৪০টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনজাতিকে তফসিলি জনজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও কিন্তু সেভাবে তাদের সচেতন করা হয়নি।

১৯৭২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনে শিক্ষকতা ও কর্মজীবন কাটাচ্ছেন ৮৬ বছর বয়সি বিশ্বজুড়ে এই সম্মানিত ব্যক্তিত্ব।