ভারতে রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম বেড়েছে ৫-১৫%

শেয়ার বিজ ডেস্ক: গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় চলতি মাস থেকে ভারতের বেশিরভাগ রেস্তোরাঁ পাঁচ থেকে ১৫ শতাংশ দাম বাড়ানো শুরু করেছে। খবর: নিউজ১৮।

ভারতে মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস বাড়িয়ে ফের ৫০ রুপি বাড়ল রান্নার গ্যাসের দাম। এক লাফে এক হাজার রুপির গণ্ডি পার করল এলপিজি গ্যাস। বৃহৎ শহরগুলোয় ১৪ দশমিক দুই কেজি ভর্তুকিহীন গ্যাস কিনতে এবার দিতে হবে এক হাজার ২৬ রুপি। কয়েক দিন আগে ১৯ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১০২ রুপি ৫০ পয়সা বেড়েছিল এক ধাক্কায়। এই দাম বাড়ার ফলে ১৯ কেজি রান্নার গ্যাসের দাম হয়েছে দুই হাজার ৩৫৫ রুপি ৫০ পয়সা। এছাড়া পাঁচ কেজি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বেড়ে হয়েছে ৬৫৫ রুপি। তবে কলকাতার মতো শহরে এই দফায় ৯ দশমিক ৫০ পয়সা কমায় ১৯ কেজি রান্নার গ্যাসের দাম হয়েছে দুই হাজার ৪৪৫ রুপি, যা চলতি মাসের প্রথম দিন ১০০ টাকা বেড়েছিল। এ কারণে দাম বেড়েছে ভোজ্যতেল থেকে মুরগি, মসলা, কাঁচামাল, সবজিসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের। এতে রেস্তোরাঁর খাবারের দাম রাতারাতি বদলে গেছে। চাইনিজ ও কন্টিনেন্টাল থেকে দেশটির স্থানীয় রেস্তোরাঁর সব পদই এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে দামি বলে অভিযোগ ভোক্তাদের।

ব্যবসায়ীদের দাবি, সব জিনিসের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। পুরোনো দামে ক্রেতাকে খাওয়ানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন তারা। তাই চলতি মাস থেকে দাম বাড়ানো যৌক্তিক বলে দাবি তাদের। অর্থাৎ বিরিয়ানি, চাউমিন, চিলি চিকেন থেকে ফ্রাইড রাইস, চিলি ফিশ, ভাত সব খাবার কিনতে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হবে ক্রেতাদের। রেস্তোরাঁ মালিকরা বলছেন, খাবারের দাম কিছুটা বাড়ায় খদ্দের অল্প হলেও কমছে। বহু জায়গার খাবার টেবিল বেশ ফাঁকা থাকছে।

এদিকে জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় অনলাইনে খাবার অর্ডার দেয়ার খরচও বেড়ে গেছে। অনলাইনে খাবারের সঙ্গে যাতায়াতের খরচ যোগ হচ্ছে আরও ৪০ থেকে ৫০ রুপি। দূরত্ব অনুযায়ী কোথাও তা কমছে, কোথাও বাড়ছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে একটি মাঝারি মানের রেস্তোরাঁয় মাসখানেক আগে এক প্লেট ভেজ (সবজি) চাউমিনের দাম ছিল ১৪০ রুপি, যার বর্তমান দাম ১৭০ রুপি। চিলি চিকেনের প্লেট ২১০ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৪০ রুপি। এর ওপর রয়েছে সার্ভিস চার্জ। এছাড়া দাম বেড়েছে স্ট্রিট ফুডেরও। এর বিপরীতে অনেকে পরিমাণ কমিয়ে একই দাম রেখেছে খাবারের।

রেস্তোরাঁ মালিকরা জানান, গত তিন মাসে দুবার খাবারের রেটচার্ট হালনাগাদ করা হয়েছে।

হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া ইস্টার্ন রিজিয়নের সভাপতি সুদেশ পোদ্দার বলেন, যেভাবে গ্যাস, রান্নার তেল ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সেকথা মাথায় রেখে পাঁচ থেকে ১৫ শতাংশ খাবারের দাম বাড়ছে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়। এরই মধ্যে অনেকে বাড়িয়েছে। অনেকে আবার মে অথবা জুনে বাড়াবে।

কভিড-১৯-এর প্রভাবে দীর্ঘ লকডাউন দেয়া হয় ভারতে। এর প্রভাব পড়ে দেশটির সাধারণ মানুষের উপার্জনে। আর্থিক খরা কাটিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মাথায় হাত তাদের। সংসার চালাতে নাজেহাল মধ্যবিত্তরা। খরচ দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ায় সঞ্চয় করতে পারছে না অনেক মধ্যবিত্ত। তাই রান্নার গ্যাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানোর আর্জি জানিয়েছেন তারা।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতেও ভারতে রান্নার গ্যাসের দাম ৫০ রুপি বাড়ানো হয়, যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন দেশটির নাগরিকরা। বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয় তখন। রান্নার গ্যাসের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ে পেট্রল ও ডিজেলের দামও।

চলতি বছর ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জেরে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেল ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলারের ওপর ছিল দীর্ঘদিন। তবে তেলের দাম প্রতি দিন খতিয়ে দেখা হলেও ভারতে প্রথা ছিল মাসের প্রথম দিন সংশোধন করা হবে

রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার। মোদি জমানায় সেই প্রথা ভেঙে মাসের মাঝে একাধিকবার কোনো ইঙ্গিত ছাড়াই আচমকা দাম বদলাচ্ছে, যা হঠাৎ চাপ বাড়াচ্ছে গ্রাহকের ওপর। উপরন্তু ভর্তুকি নামমাত্র বা শূন্য।