ভারত-কানাডা দ্বন্দ্বে বাড়তে পারে ডালের দাম

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভারত-কানাডা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের তিক্ততার রেশ পড়তে পারে পণ্যের ওপর। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, দুই দেশের টানাপড়েনের জেরে ভারতে ডাল রপ্তানি বন্ধ করতে পারে কানাডা। ফলে ভারতের বাজারে ডালের দাম বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। খবর: ভারত।

অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করতে কানাডা থেকে বিপুল পরিমাণে ডাল আমদানি করে ভারত।

গত কয়েকদিন ধরে ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক সংঘাত চলছে। বলা যায়, চরমে উঠেছে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক। দেশের সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানান, কানাডার নাগরিক খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের নেপথ্যে ভারতীয়দের হাত থাকতে পারে। এ দাবির পক্ষে প্রমাণ মিলেছে বলেও জানান কানাডার প্রধানমন্ত্রী। তার পর কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়ে দেন, কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিকদের মধ্যে অন্যতম প্রধান এক কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কানাডার এমন অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়ে কানাডার এক কূটনীতিককে পাঁচ দিনের মধ্যে দেশে ফিরতে নির্দেশ দেয় দিল্লি। তারপর থেকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়েছে।

এ ঘটনার প্রভাব পড়তে পারে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে, সে রকমই আশঙ্কা করছে ওয়াকিবহাল মহল। তাদের অনুমান, এ টানাপড়েনের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কানাডা থেকে ডাল আমদানি বন্ধ হয়ে গেলে দেশের বাজারে ডালের দাম বাড়বে। আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রের অস্বস্তি বাড়াতে পারে এ ইস্যু।

রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, সম্প্রতি ভারত কয়েকটি পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। চলতি বছরের জুলাইয়ে বিশ্বের বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশটি সাদা চালের রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। খুচরা বাজারে চালের দাম এক মাসে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির পর রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত সরকার। ভারত অতীতে কখনও বাসমতি চালের রপ্তানি নিষিদ্ধ করেনি। তবে ২০০৮ সালে দেশটির সরকার এই চালের রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করেছিল।

২০২২ সালে প্রায়ই একই ধরনের আকস্মিক এক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে গমের রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল ভারত। পরবর্তী সময়ে চিনি ও চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দেশটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, কানাডা থেকে আমদানি বন্ধ করার কথা ভাবছে না কেন্দ্রীয় সরকার। এমনকি কানাডার তরফেও বাণিজ্য বন্ধ করার কথা বিবেচনা করা হয়নি।

২০২২-২০২৩ অর্থবর্ষে ভারতের চাহিদার অর্ধেকের বেশি ডাল কানাডা থেকে আমদানি করা হয়। তবে চলতি বছর থেকে কানাডার প্রতি নির্ভরতা কমাতে চাইছেন ভারতের ডাল ব্যবসায়ীরা। তাই অস্ট্রেলিয়া থেকে ডাল কেনার দিকে ঝুঁকছেন তারা। ফলে কানাডার সঙ্গে বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা হলেও সমস্যায় পড়বে না ভারত।

এর মধ্যেই গত সপ্তাহে কানাডা থেকে প্রায় এক লাখ টন মসুর ডাল ভারতের বিভিন্ন বন্দরে পৌঁছায়। বিশ্লেষকরা তখন বলেন, মসুর আমদানির ক্ষেত্রে ভারত সরকার একরকম স্বস্তিতে রয়েছে।

ভারতের সরকারি হিসাবে, দেশটিতে বার্ষিক মসুর ডালের চাহিদা ২৩ লাখ টন, দেশে উৎপাদিত হয় ১৬ লাখ টন। এখন ভারতের বিভিন্ন বন্দরে প্রায় ছয় লাখ টন মসুর ডাল আসায় স্বস্তি ও আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে, এ বছর ঘাটতি হবে না। দেশটির সরকার সম্ভবত ২০২৪ সালের পরও বিনা শুল্কে মসুর ডাল আমদানির সুযোগ রাখবে। এটা বিদেশিদের পরিষ্কার ইঙ্গিত দেয়া যে ভারতের মসুর ডাল আমদানির পথ খোলা রয়েছে।

ভারতের সরকারি তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কানাডা থেকে ভারত ৩ হাজার ১২ কোটি রুপির বিনিময়ে ৪ দশমিক ৮৫ লাখ টন মসুর আমদানি করেছে। চলতি বছরের এপ্রিল-জুনে আরও প্রায় এক লাখ টন মসুর ডাল কানাডা থেকে আমদানি করা হয়েছে।