Print Date & Time : 27 July 2025 Sunday 4:25 pm

ভার্চুয়াল আদালতে ভেঙে পড়ছে বিচার ব্যবস্থা: ঢাকা আইনজীবী সমিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনাভাইরাস মহামারি ছড়ানো ঠেকাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে যেভাবে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে তাতে দেশের ‘ঐতিহ্যবাহী’ বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে বলে মনে করছে ঢাকা আইনজীবী সমিতি।

এজন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে আদালত খুলে দেওয়ার পাশাপাশি এ-সংক্রান্ত যে আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে, তা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

গতকাল আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতির কাছে পাঠানো সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক হোসেন আলী খানের চিঠিতে এ আহ্বান জানানো হয়। ঢাকা আইনজীবী সমিতির দপ্তর সম্পাদক এইচএম মাসুম এই চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়েছেন।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য সংখ্যা ২৫ হাজারের বেশি। ঢাকার জেলা জজ আদালত ও মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ১১ মে থেকে ভার্চুয়াল কার্যক্রম চলছে।

এভাবে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার কারণে উপার্জনে টান পড়ায় আইনজীবীদের মধ্যে ‘ক্ষোভ ও অসন্তোষের’ কথা তুলে ধরা হয় চিঠিতে। এতে বলা হয়, ‘আইনজীবীদের প্রশিক্ষণবিহীন ভার্চুয়াল আদালত অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফলতার মুখ দেখছে না। তাই ভার্চুয়াল আদালতের কারণে ঐতিহ্যবাহী বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সে কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে নিয়মিত আদালত খুলে দেওয়া প্রয়োজন। এমতাবস্থায় প্রস্তাবিত আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার আইন ২০২০ জাতীয় সংসদে পাস না করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’

উল্লেখ্য, গত ২৬ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটিতে আদালত বন্ধ রেখে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। দুদিন পর ৯ মে ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বা ক্ষেত্রমত হাইকোর্ট বিভাগ, সময় সময়, প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) জারি করতে পারবে।

অধ্যাদেশে আরও বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেওয়ানি কার্যবিধি বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর যাই থাকুক না কেন, যে কোনো আদালত এই অধ্যাদেশের ধারা ৫-এর অধীন জারি করা প্র্যাকটিস নির্দেশনা (বিশেষ বা সাধারণ) সাপেক্ষে, অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে বিচারপ্রার্থী পক্ষরা বা তাদের আইনজীবী বা সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তি বা সাক্ষীদের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করে যে কোনো মামলার বিচার বা বিচারিক অনুসন্ধান বা দরখাস্ত বা আপিল শুনানি বা সাক্ষ্যগ্রহণ বা যুক্ততর্ক গ্রহণ বা আদেশ বা রায় দিতে পারবে।

সেই অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত করতে গত ২৩ জুন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের পক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার বিল-২০২০’ সংসদে তোলেন। পরে বিলটি পাঁচ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দিতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, অধ্যাদেশ জারির পর তা সংসদে তোলা হয় গত ১০ জুন। অধ্যাদেশটি আইনে পরিণত করতে হলে চলমান অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের তারিখ হতে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করে অনুমোদন করাতে হবে। ৩০ দিন অতিবাহিত হলে অধ্যাদেশটির কার্যকারিতা লোপ পাবে।