নিজস্ব প্রতিবেদক: চিত্রাভিনেতা ফেরদৌস আহমদকে শুভেচ্ছাদূত নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (নিখাক)। গতকাল বৃহস্পতিবার কর্তৃপক্ষের প্রশিক্ষণ কক্ষে শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিয়োগদানের চুক্তিতে তিনি সই করেন। এ সময় ফেরদৌস বলেন, এই প্রথম কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের শুভেচ্ছাদূত হলাম। এটি আমি আমার দায়বদ্ধতা থেকেই করছি। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় কোনো অবদান রাখতে পারলে নিজেকে গর্বিত মনে করব।
তিনি বলেন, মানুষ আমাকে ভালোবাসে। সে জায়গা থেকে খাদ্য নিরাপত্তায় কাজ করব। মানুষ আমার কথাগুলো মানবে বলে আমি বিশ্বাস করি। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে ভালোভাবে কাজ করতে পারব বলে আশা করছি।
এরই মধ্যে তিনি নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর ও সিলেটে সচেতনতামূলক কাজে অংশ নিয়েছেন। সেই সফরের পর তার কাছে মানুষ খাদ্য নিয়ে বিভিন্ন বার্তা পাঠাচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, অনেকেই ফোন করছেন। কেউ মেসেঞ্জারে জানাচ্ছেন। তারা খাদ্য নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরছেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার বলেন, ফেরদৌস খুবই সহজ শর্তে আমাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য যুক্ত হয়েছেন। আগামী এক বছরের জন্য চুক্তি হয়েছেন, আশা করছি সেটা আমরা দীর্ঘ সময়ব্যাপী নিতে পারব। তিনি বলেন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ চায় প্রতিটি মানুষকে খাদ্য নিয়ে সচেতন করতে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শেখাতে। সেক্ষেত্রে ফেরদৌস আমাদের দারুণভাবে সহায়তা করতে পারবেন বলে আশা করছি।
তার আগে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরে ১৪৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১১৭টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। এসব অভিযানে মোট এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া এবছর রমজান উপলক্ষে গত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ছয়টি মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে। পাশাপাশি রমজানের আগে চারটি কর্মশালার মাধ্যমে প্রায় ৫০০ জন পথখাবার বিক্রেতাকে প্রশিক্ষণ শেষে সনদ দেয়া হয়েছে। কর্মশালাগুলোয় চকবাজার, আগারগাঁও, বেইলি রোড ও মিরপুর এলাকায় যারা পথখাবার প্রস্তুত ও বিক্রি করেন, তাদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
অন্যদিকে সারাদেশের প্রতিটি জেলায় ৩০ জন করে খাদ্যকর্মীকে নিরাপদ ইফতার প্রস্তুত ও পরিবেশন-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। শুধু রমজান উপলক্ষে প্রায় দুই হাজার ৫০০ খাদ্যকর্মী প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন।
সারাদেশে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় নিরাপদ ইফতার প্রস্তুত ও বিক্রি-সম্পর্কিত বিষয়ে মাইকিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক বার্তা তিনটি এফএম রেডিওতে মোট ১২০ মিনিট প্রচার করা হয়।
উপজেলা পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সারাদেশে মোট ৩২৩টি উপজেলায় এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। গৃহিণী পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক সচেতনতার লক্ষ্যে সারাদেশে ১২৮টি উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্কুল পর্যায়ে নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক বিভিন্ন বিষয় শেখানোর জন্য সারাদেশের ৩০০টি স্কুলে সচেতনতামূলক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
এতে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালের প্রাথমিক পর্যায়ের বিজ্ঞান বইয়ের খাদ্যবিষয়ক অধ্যায়গুলোয় নিরাপদ খাদ্যবিষয়ক কনটেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং ২০২৪ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ের বইয়েও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন নিখাক সদস্য (খাদ্যভোগ ও ভোক্তা অধিকার) মো. রেজাউল করিম, সদস্য (জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি) মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদ। নিখাক চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব অভিরূপ সাহার উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সদস্য (খাদ্যশিল্প ও উৎপাদন) প্রফেসর ড. মো. আব্দুল আলীম ও সচিব আব্দুন নাসের খান।