Print Date & Time : 4 July 2025 Friday 10:03 pm

ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন কিশোরগঞ্জের কৃষক

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ভুট্টা চাষে বদলে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জে হাওরপাড়ের চরাঞ্চলের মানুষের জীবন। গত কয়েক বছরে হাওরে কৃষকরা ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন। ভুট্টায় উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি এবং বন্যা কিংবা খরার ভয় নেই। এবারও ফলন হয়েছে বাম্পার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে এ সোনালি ফসল ভুট্টা।

জানা গেছে, রোদের ঝিকিমিকিতে হাওরের প্রান্তরে যেন মিটিমিটি হাসছে সোনালি ভুট্টার সারি। দূর থেকে দেখলে মনে হয় রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে একরাশ কাঁচা সোনা! কিষান-কিষানিরা এখন ব্যস্ত তাদের স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে। হাওরে আদিকাল থেকে ধান চাষে জীবিকা নির্বাহ করতেন কৃষকেরা। কিন্তু অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ না পেলে খুব একটা লাভের মুখ দেখা যেত না। তবে যখন দেশের পোলট্রি ও ফিড মিল খাতে ভুট্টার চাহিদা বেড়ে যায়, তখন হারাঞ্চলের কৃষকদের চোখে নতুন সম্ভাবনার আলো। তারা ধান ছেড়ে আগলে ধরেন ভুট্টার খুঁটি। এ ভুট্টা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি। বন্যা-খরার ভয় নেই তেমন একটা। বর্ষা শুরুর আগেই ফসল ঘরে তোলা যায়। এ বছর কিশোরগঞ্জ জেলায় ১২ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যেখানে উৎপাদন ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ২১০ মেট্রিক টন। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১২ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে হয়েছে আবাদ। সবচেয়ে বেশি ভুট্টা চাষ হয়েছে জেলার হাওরাঞ্চলের চার উপজেলায়। এ চার উপজেলায় ৭ হাজার ৭০৩ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। জেলার নিকলী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ১১০ হেক্টর, মিঠামইনে ২ হাজার ৮৮০ হেক্টর, বাজিতপুরে ২ হাজার ১০ হেক্টর ও অষ্টগ্রামে ৯৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এবার হয়েছে বাম্পার ফলন। ফলে আশা জেগেছে ছাড়িয়ে যাওয়ার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। আর পাইকাররাও মাঠ থেকেই কিনে নিচ্ছেন ভুট্টা মণপ্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়। এ ভুট্টা অনেকটাই দূর করেছে রবিশস্য নিয়ে হাওরের কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। উঁকি দিচ্ছে সম্ভাবনার নতুন ভোর।

মিঠামইন উপজেলার কৃষক আব্দুর রহিম জানান, ‘বন্যায় আমাদের হাওরাঞ্চলে ধান চাষে ঝুঁকি থাকলেও ভুট্টা চাষে তেমন ঝুঁকি নেই। কারণ বর্ষা আসার আগেই আমরা ভুট্টার ফলন ঘরে তুলতে পারি। এ ছাড়া ভুট্টা চাষে ধান চাষের চেয়ে খরচ কম হয়, কিন্তু লাভ বেশি হয়।

কৃষক শরিফ উদ্দিন জানান, এ জমিগুলো উঁচু, এগুলো পতিত থাকত, এখানে ভুট্টা চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। যদি দরদাম ঠিক থাকে তাহলে লাভবান হব। কৃষি অফিস থেকেও আমরা ভুট্টা চাষে সহযোগিতা পেয়েছি।

ইটনা হাওরের কৃষক নাজিম উদ্দিন বলেন, ভুট্টা চাষে আমাদের তিনভাবে লাভ হয়। ভুট্টা বিক্রি করা, ভুট্টার কাঁচা পাতা গবাদি পশুকে খাদ্য হিসেবে খাওয়ানো ও ভুট্টা গাছ শুকিয়ে লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাদিকুর রহমান জানান, হাওরে নিরাপদে ফসল হিসেবেই ভুট্টা চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। কারণ হাওরে আগাম বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ভুট্টা চাষ করলে আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ভুট্টার ভালো দাম ও চাহিদার কারনে এ চাষ কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে জনপ্রিয় হচ্ছে ভুট্টা। ভুট্টা চাষে কৃষকদের নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তিগত পরামর্শ, বীজ নির্বাচন, সার ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে রোগবালাই দমন পর্যন্ত পাশে ছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।