Print Date & Time : 14 September 2025 Sunday 5:53 am

ভুয়া এলসি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা ব্যবস্থা নিন 

‘এলসি খোলায় অনিয়ম: জরিমানা গুনল তিন ব্যাংক’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা পাঠকের মনোযোগ কেড়েছে বলেই ধারণা। প্রতিবেদেন ভাষ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য ও আন্ডার ইনভয়েসিং করে এলসি (ঋণপত্র) খুলেছে সরকারি-বেসরকারি তিন ব্যাংক। ওই তিন ব্যাংককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক তিনটির মধ্যে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক, অন্য দুটি ব্যাংক ইসলামি ধারার। নিয়ন্ত্রক সংস্থা সূত্রে এ তথ্য জানা জনা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে ৩০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের এলসি খোলার তথ্য অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হয়। কিন্তু সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল শাখা ও ইসলামি ধারার একটি ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি এলসি খোলে। দুই শাখার এলসি বা ঋণপত্র খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে বাংলাদেশ ব্যাংকে তথ্য জানায়নি। এজন্য ব্যাংক দুটির শাখা উপ-মহাব্যবস্থাপককে (ডিজিএম) এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়। এছাড়া ইসলামি ধারার আরেক ব্যাংকের সাতক্ষীরা শাখা আন্ডার ইনভয়েসিং (পণ্যের দাম কম দেখিয়ে) এলসি খুলেছে।

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে ভয়াবহ আকারে অর্থ পাচারের তথ্য দিয়েছে কয়েকটি খ্যাতনামা সংস্থা। জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউএনডিপি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন মহাব্যবস্থাপকের ব্যক্তিগত গবেষণায়ও দেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। সবার এর ভাষ্য প্রায় এক: বড় অংশই পাচার হয় ব্যাংক খাতের মাধ্যমে। এসব অর্থের বড় অংশ গেছে ভুয়া এলসির মাধ্যমে।

অর্থ পাচার বন্ধে এলসি তথা আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত লেনদেন এবং এ-সংক্রান্ত কাগজপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করতে হবে। আলোচ্য ঘটনা তিনটিতে দণ্ডিতরা ব্যাংকের কর্মকর্তা। কিন্তু অনেক সময় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যই এতে জড়িত থাকেন। তিনি প্রথমে নিজের ব্যাংকে ভুয়া এলসি খোলেন। পরিচালক হওয়ায় দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা সেটি যাচাই-বাছাইয়ের চিন্তাও করেন না। এরপর ব্যাংকিং চ্যানেলে যথানিয়মে এলসির অনুলিপি অনলাইন পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত সার্ভারে এন্ট্রি হয়। কয়েক ধাপ পর পণ্য খালাস সংক্রান্ত কাস্টমস সনদের কপি দেয়া হয় আমদানিকারককে, এলসি ওপেনিং ব্যাংকে, অন্যটি  নিয়ন্ত্রক সংস্থার সার্ভারে। প্রতিটি এলসি ওপেন করার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য দেশে আনা হয়েছে কি না, সেটি আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখা নিয়মিত যাচাই করে। যাচাইয়ে সত্যতা পেলেই এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে বলে গণ্য হবে। না হলে তদন্ত-পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার নিয়ম রয়েছে। এটি হলো এলসি-পরবর্তী পণ্য আমদানি-রপ্তানির নিয়মের কথা। কিন্তু অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে কোনো পণ্যই দেশে আনা হয় না।

এলসি ওপেনিং থেকে শুরু করে প্রতিটি ধাপে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়। যেহেতু আদৌ পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয় না, তাই বিষয়টি কাস্টমসের জানারও কথা নয়। কথিত আমদানিকারক অর্থ পাচারের জন্যই এভাবে এলসি খোলেন। তাই বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়া দেশের আর কারও জানা সম্ভব নয়।

মূলত এ সুযোগ নিয়েই গত কয়েক বছরে বিপুল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে যার কব্জায় যত বেশি ব্যাংক এবং যে যত বেশি প্রভাবশালী তার পক্ষে এভাবে অর্থ পাচার করা তত সহজ। অর্থ পাচার ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক শূন্য সহনশীলতায় এলসি-সংক্রান্ত নিয়মগুলো যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।